পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি vరిdఏ হইয়াছি— নিতান্তই গওগ্রাম, একটি বৃহৎ খেতের ধারে একটা প্রাচীর-দেওয়া চালাঘরের মধ্যে ঢুকিয়া পড়িলাম। ঘরের কর্তা উঠানে আমাদের বসিবার জন্ত দুটি মোড় আনিয়া দিলেন। তখন দাওয়ার উপরে ইস্কুল চলিতেছে। প্রাইমারি ইস্কুলের পণ্ডিত একটা কাঠের চৌকিতে বসিয়া ঘরের একটা খুটির গায়ে দুই পা তুলিয়া দিয়াছে। নীচে মাটিতে বসিয়া মেট-হাতে ছেলেরা মহা কোলাহল করিতে করিতে বিষ্ঠালাভ করিতেছে। বাড়ির কর্তাটির নাম তারিণী চাটুজ্জে । ভূপেনের কাছে তিনি তন্ন তন্ন করিয়া আমার পরিচয় লইলেন। র্তাবুতে ফিরিয়া আসিতে আসিতে ভূপেন বলিল, “ওহে, তোমার কপাল ভালো, তোমার একটা বিবাহের সম্বন্ধ আসিতেছে।” আমি বলিলাম, সে কী রকম ? ভূপেন কহিল, “ওই তারিণী চাটুজ্জে লোকটি মহাজনি করে, এতবড়ো কৃপণ জগতে নাই। ওই-যে ইস্কুলটি বাড়িতে স্থান দিয়াছে, সেজন্ত নূতন ম্যাজিষ্ট্রেট আসিলেই নিজের লোকহিতৈর্ষিতা লইয়া বিশেষ আড়ম্বর করে। কিন্তু ইস্কুলের পণ্ডিতটাকে কেবলমাত্র বাড়িতে থাইতে দিয়া রাত দশটা পর্যন্ত স্বদের হিসাব কষাইয়া লয়, মাইনেটা গবর্মেন্টের সাহায্য এবং ইস্কুলের বেতন হইতে উঠিয়া যায়। উহার একটি বোনের স্বামিবিয়োগ হইলে পর সে বেচারা কোথাও আশ্রয় না পাইয়া ইহারই কাছে আসে। সে তখন গর্ভিণী ছিল। এখানে আসিয়া একটি কন্যা প্রসব করিয়া নিতান্ত অচিকিৎসাতেই সে মারা যায়। আর-একটি বিধবা বোন ঘরকন্নার সমস্ত কাজ করিয়া ঝি রাখিবার খরচ বঁাচাইত, সে এই মেয়েটিকে মায়ের মতো মানুষ করে। মেয়েটি কিছু বড়ো হইতেই তাহারও মৃত্যু হইল। সেই অবধি মামা ও মামীর দাসত্ব করিয়া অহরহ ভংসনা সহিয়া মেয়েটি বাড়িয়া উঠিতেছে। বিবাহের বয়স যথেষ্ট হইয়াছে, কিন্তু এমন অনাথার পাত্র জুটিবে কোথায় ? বিশেষত উহার মা-বাপকে এখানকার কেহ জানিত না, পিতৃহীন অবস্থায় উহার জন্ম, ইহা লইয়া পাড়ার ঘোটকর্তারা ষথেষ্ট সংশয়প্রকাশ করিয়া থাকেন। তারিণী চাটুজ্জের অগাধ টাকা আছে সকলেই জানে, লোকের ইচ্ছা, এই মেয়ের বিবাহ উপলক্ষে কণ্ঠ সম্বন্ধে খোটা দিয়া উহাকে বেশ একটু দোহন করিয়া লয়। ও তো আজ চার বছর ধরিয়া মেয়েটির বয়স দশ বলিয়া পরিচয় দিয়া আসিতেছে। অতএব, হিসাবমত তার বয়স এখন অন্তত চোঁদ হইবে। কিন্তু ঘাই বল, মেয়েটি নামেও কমল, সকল বিষয়েই একেবারে লক্ষ্মীর প্রতিমা। এমন স্বন্দর মেয়ে জামি তো দেখি নাই। এ গ্রামে বিদেশের কোনো ব্রাহ্মণ যুবক উপস্থিত হইলেই তারিণী তাহাকে বিবাহের জন্য হাতে-পায়ে ধরে। যদি বা কেহ রাজি হয়, গ্রামের লোকে ভাংচি দিয়া তাড়ায়। অতএব এবারে নিশ্চয় তোমার পালা।’ জান তো মা, আমার মনের অবস্থাটা