পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৬৪ রবীন্দ্র-রচনাবলী শরীরে আর শক্তি রহিল না। অবশেষে এক জায়গায় এমন একটা ভাঙাতটের কাছে আসিয়া পৌছিল, যেখানে সম্মুখে আর কোনো পথ পাইল না। নিতান্ত অশক্ত হইয়া একটা বটগাছের তলায় শুইয়া পড়িল, শুইবামাত্রই কখন নিদ্ৰা আসিল জানিতেও পারিল না । প্রত্যুষেই চোখ মেলিয়া দেখিল, কৃষ্ণপক্ষের চাদের আলোকে অন্ধকার ক্ষীণ হইয়া আসিয়াছে এবং একটি প্রৌঢ় স্ত্রীলোক তাহাকে জিজ্ঞাসা করিতেছে, “তুমি কে গা ? শীতের রাত্রে এই গাছের তলায় কে শুইয়া ?” কমলা চকিত হইয়া উঠিয়া বসিল । দেখিল, তাহার অদূরে ঘাটে দুখান বজরা বাধা রহিয়াছে— এই প্রৌঢ়াটি লোক উঠিবার পূর্বেই স্নান সারিয়া লইবার জন্য প্রস্তুত হইয়া আসিয়াছেন । প্রৌঢ়া কহিলেন, “ই গা, তোমাকে যে বাঙালির মতে দেখিতেছি ।” কমলা কহিল, “আমি বাঙালি।” প্রৌঢ়া । এখানে পড়িয়া আছ যে ? কমল । আমি কাশীতে যাইব বলিয়৷ বাহির হইয়াছি । রাত অনেক হইল, ঘুম আসিল, এইখানেই শুইয়া পড়িলাম। প্রৌঢ়া। ওমা, সে কী কথা ! হঁটিয়া কাশী যাইতেছ? আচ্ছা চলো, ওই বজরায় চলো, আমি স্নান সারিয়া আসিতেছি । স্নানের পর এই স্ত্রীলোকটির সহিত কমলার পরিচয় হইল । গাজিপুরে যে সিদ্ধেশ্বরবাবুদের বাড়িতে খুব ঘটা করিয়া বিবাহ হইতেছিল, র্তাহার। ইহাদের আত্মীয়। এই প্রৌঢ়াটির নাম নবীনকালী এবং ইহার স্বামীর নাম মুকুন্দলাল দত্ত— কিছুকাল কাশীতেই বাস করিতেছেন। ইহারা আত্মীয়ের বাড়ি নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করিতে পারেন নাই, অথচ পাছে র্তাহাদের বাড়িতে থাকিতে বা খাইতে হয় এইজন্য বোটে করিয়া গিয়াছিলেন। বিবাহবাড়ির কত্রী ক্ষোভপ্রকাশ করাতে নবীনকালী বলিয়াছিলেন, ‘জানই তো ভাই, কর্তার শরীর ভালো নয়। আর ছেলেবেলা হইতে উহাদের অভ্যাসই একরকম। বাড়িতে গোরু রাখিয়া দুধ হইতে মাখন তুলিয়া সেই মাখন-মারা ঘিয়ে উহার লুচি তৈরি হয়— আবার সে গোরুকে যা-তা খাওয়াইলে চলিবে না’ ইত্যাদি ইত্যাদি । নবীনকালী জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার নাম কী ?” কমলা কহিল, “আমার নাম কমলা।” নবীনকালী। তোমার হাতে লোহা দেখিতেছি, স্বামী আছে বুঝি ?