পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৯৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩৮২ রবীন্দ্র-রচনাবলী অন্নদাবাবু হঠাৎ অত্যন্ত রাগ করিয়া উঠিয়া কহিলেন, “অক্ষয়, তোমার কাণ্ডজ্ঞান কিছুমাত্র নাই। রমেশ আমার এখানেই বা কেন আসিবে, আর তাহার জিনিসপত্র আমিই বা কেন রাখিতে যাইব ?” অক্ষয় কহিল, “যা হোক, অন্যায় করুন আর ভুল করুন, রমেশবাবু এখন নিশ্চয়ই অমৃতপ্ত হইয়াছেন, এ সময়ে কি তাহাকে সাস্তুনা দেওয়া তাহার পুরাতন বন্ধুদের কর্তব্য নয় ? তাহাকে কি একেবারেই পরিত্যাগ করিতে হইবে ?” অন্নদাবাবু কহিলেন, “অক্ষয়, তুমি কেবল আমাদের পীড়ন করিবার জন্য এই কথাটা লইয়া বার বার আন্দোলন করিতেছ। আমি তোমাকে বিশেষ করিয়া বলিয়া দিতেছি, এ প্রসঙ্গ তুমি আমাদের কাছে কখনোই তুলিয়ে না।” হেমনলিনী স্নিগ্ধস্বরে বলিল, “বাবা, তুমি রাগ করিয়ে না, তোমার অসুখ করিবে— অক্ষয়বাবু যাহা বলিতে চান বলুন-না, তাহাতে দোষ কী ।” অক্ষয় কহিল, “না না, আমাকে মাপ করিবেন, আমি ঠিক বুঝিতে পারি নাই ।” @ 8 মুকুন্দবাবু সপরিজনে কাশী ত্যাগ করিয়া মিরাটে যাইবেন, স্থির হইয়া গেছে। জিনিসপত্র বাধা হইয়াছে, কাল প্রভাতেই ছাড়িতে হইবে । কমলা নিত্যস্ত আশা করিয়াছিল, ইতিমধ্যে এমন একটা-কিছু ঘটনা ঘটিবে যাহাতে তাহদের যাওয়া বন্ধ হইবে । ইহাও সে একান্তমনে আশা করিয়াছিল যে, নলিনাক্ষ ডাক্তার হয়তো আর দুই-একবার তাহার রোগীকে দেখিতে আসিবেন । কিন্তু দুইয়ের কোনোটাই ঘটিল না । পাছে বামুন-ঠাকরুন যাত্রার উদযোগের গোলেমালে পালাইয়া যাইবার অবকাশ পায়, এই আশঙ্কায় নবীনকালী তাহাকে কয়দিন সর্বদাই কাছে কাছে রাথিয়াছেন, তাহাকে দিয়াই জিনিসপত্র বাধা ছাদার অনেক কাজ করাইয়া লইয়াছেন। কমলা একান্তমনে কামনা করিতে লাগিল, আজ রাত্রির মধ্যে তাহার এমন একটা কঠিন পীড়া হয় যে, তাহাকে সঙ্গে লইয়া যাওয়া নবীনকালীর পক্ষে অসম্ভব হইয়া উঠে। সেই গুরুতর পীড়ার চিকিৎসাভার কোন ডাক্তারের উপর পড়িবে তাহাও সে মনে মনে ভাবে নাই এমন নহে। এই পীড়ায় যদি অবশেষে তাহার মৃত্যু ঘটে, তবে আসন্ন মৃত্যুকালে সেই চিকিৎসকের পায়ের ধুলা লইয়া সে মরিতে পারিবে, ইহাও সে চোখ বুজিয়া কল্পনা করিতেছিল।