পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী "ל"לס\ কমলা যখন বলিল, বিবাহের পূর্বে বা বিবাহের রাত্রে সে তাহার স্বামীকে দেখে নাই তখন শৈল কহিল, “তোর মতো বোকা মেয়ে তো আমি দেখি নাই। তোর চেয়ে কম বয়সে আমার বিবাহ হইয়াছিল— তুই কি মনে করিস, লজ্জায় আমি আমার বরকে কোনো সুযোগে দেখিয়া লই নাই!” কমলা কহিল, “লজ্জা নয় দিদি। আমার বিবাহের বয়স প্রায় পার হইয়া গিয়াছিল। এমন সময়ে হঠাৎ যখন আমার বিবাহের কথা স্থির হইয়া গেল, তখন আমার সমস্ত সঙ্গিনীরা আমাকে বড়োই খ্যাপাইতে আরম্ভ করিয়াছিল। অধিক বয়সে বরকে পাইয়া আমি যে সাত রাজার ধন মানিক পাই নাই, ইহাই দেখাইবার জন্য আমি তাহার দিকে দৃকপাতমাত্র করি নাই। এমন-কি, তাহার জন্য কিছুমাত্র আগ্রহ মনের মধ্যেও অনুভব করা আমি নিতান্ত লজ্জার বিষয়, অগৌরবের বিষয় বলিয়৷ মনে করিয়াছিলাম। আজ তাহারই শোধ দিতেছি।” এই বলিয়া কমলা কিছুক্ষণ চুপ করিয়া রহিল। তাহার পরে আরম্ভ করিল, “বিবাহের পর নৌকাডুবি হইয়া আমরা কী করিয়া রক্ষা পাইলাম, সে কথা তো তোমাকে পূর্বেই বলিয়াছি। কিন্তু যখন বলিয়াছিলাম তখনো জানিতাম না যে, মৃত্যু হইতে রক্ষা পাইয়া যাহার হাতে পড়িলাম, যাহাকে স্বামী বলিয়া জানিলাম, তিনি আমার স্বামী নহেন ।” শৈলজা চমকিয়া উঠিল ; তাড়াতাড়ি কমলার কাছে আসিয়া তাহার গলা ধরিয়া কহিল, “হায় রে পোড়াকপাল– ও, তাই বটে। এতক্ষণে সব কথা বুঝিলাম। এমন সর্বনাশও ঘটে ।” কমলা কহিল, “বল দেখি দিদি, যখন মরিলেই চুকিয়া যাইত তখন বিধাতা এমন বিপদ ঘটাইলেন কেন?” শৈলজা জিজ্ঞাসা করিল, “রমেশবাবুও কিছুই জানিতে পারেন নাই ?” কমলা কহিল, “বিবাহের কিছুকাল পরে তিনি এক দিন আমাকে স্বশীল বলিয়া ডাকিতেছিলেন, আমি তাহাকে কহিলাম, ‘আমার নাম কমলা, তবু তোমরা সকলেই আমাকে স্বশীল বলিয়া ডাক কেন ? আমি এখন বুঝিতে পারিতেছি, সেইদিন র্তাহার ভুল ভাঙিয়াছিল। কিন্তু দিদি, সে-সকল দিনের কথা মনে করিতেও আমার মাথা হেঁট হইয়া যায়।” এই বলিয়া কমলা চুপ করিয়া রহিল। শৈলজা একটু একটু করিয়া কথায় কথায় সমস্ত বৃত্তান্ত আগাগোড়া বাহির করিয়া লইল । সমস্ত কথা শোনা হইলে সে কহিল, “বোন, তোর দুঃখের কপাল, কিন্তু আমি এই কথা ভাবিতেছি, ভাগ্যে তুই রমেশবাবুর হাতে পড়িয়াছিলি। যাই বলিল, বেচার