পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী "לפס\ করিয়া বলা চলে। সেই জন্যই কথাটা পাড়িতেছি, তুমি আমার কাছে লজ্জা করিয়ো না। আচ্ছা, বলে তো বাছা, সেদিন তোমার বাপের কাছে ষে প্রস্তাব করিয়াছিলাম তিনি কি তোমাকে বলেন নি।” হেমনলিনী নতমুখে কহিল, “হা, বলিয়াছিলেন।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “কিন্তু তুমি বাছ, সে কথায় নিশ্চয়ই রাজি হও নাই। যদি রাজি হইতে তবে অন্নদাবাবু তখনি আমার কাছে ছুটিয়া আসিতেন। তুমি ভাবিলে, আমার নলিন সন্ন্যাসী-মানুষ, দিবারাত্রি কী-সব যোগষাগ লইয়া আছে, উহাকে আবার বিবাহ করা কেন ? হোক আমার ছেলে, তবু কথাটা উড়াইয়া দিবার নয়। উহাকে বাহির হইতে দেখিলে মনে হয়, উহার যেন কিছুতেই কোনোদিন আসক্তি জন্মিবার সম্ভাবনা নাই। কিন্তু সেটা তোমাদের ভুল। আমি উহাকে জন্মকাল হইতে জানি, আমার কথাটা বিশ্বাস করিয়ো । ও এত বেশি ভালোবাসিতে পারে যে, সেই ভয়েই ও আপনাকে এত করিয়া দমন করিয়া রাখে । উহার এই সন্ন্যাসের খোলা ভাঙিয়া যে উহার হৃদয় পাইবে সে বড়ো মধুর জিনিসটি পাইবে, তাহা আমি বলিয়া রাখিতেছি। মা হেম, তুমি বালিকা নও, তুমি শিক্ষিত, তুমি আমার নলিনের কাছ হইতেই দীক্ষা লইয়াছ, তোমাকে নলিনের ঘরে প্রতিষ্ঠিত করিয়া আমি যদি মরিতে পারি তবে বড়ো নিশ্চিন্ত হইয়া মরিতে পারিব । নহিলে, আমি নিশ্চয় জানি, আমি মরিলে ও আর বিবাহই করিবে না। তখন ওর কী দশা হইবে ভাবিয়া দেখো দেখি । একেবারে ভাসিয়া বেড়াইবে। যাই হোক, বলে তো বাছা, তুমি তো নলিনকে শ্রদ্ধা কর আমি জানি, তবে তোমার মনে আপত্তি উঠিতেছে কেন ?” হেমনলিনী নতনেত্ৰে কহিল, “ম, তুমি যদি আমাকে যোগ্য মনে কর তবে আমার কোনো আপত্তি নাই ।” শুনিয়া ক্ষেমংকরী হেমনলিনীকে কাছে টানিয়া লইয়া তাহার মাথায় চুম্বন করিলেন । এ-সম্বন্ধে আর কোনো কথা বলিলেন না । o “হরিদাসী, এ ফুলগুলো”— বলিতে বলিতে পাশে চাহিয়া দেখিলেন, হরিদাসী নাই। সে নিঃশব্দপদে কখন উঠিয়া গেছে। পূর্বোক্ত আলোচনার পর ক্ষেমংকরীর কাছে হেমনলিনী সংকোচ বোধ করিল, ক্ষেমংকরীরও বাধো-বাধো করিতে লাগিল। তখন হেম কহিল, “মা, আজ তবে সকালসকাল যাই । বাবার শরীর ভালো নাই।” বলিয়া ক্ষেমংকরীকে প্রণাম করিল। ক্ষেমংকরী তাহার মাথায় হাত দিয়৷ কহিলেন, “এসো, মা, এসো।”