পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২২

নৌকাডুবি 8 od. আশার অতীত, তাহার জন্ত যেন কোনো কামনা মনের মধ্যে না থাকে। কেবল সেবা করিব, যতদিন জীবন আছে কেবল সেবা করিব, আর-কিছু চাহিব না— চাহিব না— চাহিব না।’ - .ع .# তাহার পর কমলা শুইতে গেল । এ পাশ - ও পাশ করিতে করিতে ঘুমাইয়া পড়িল । রাত্রে দুই-তিন বার ঘুম ভাঙিয়া গেল। ভাঙিবামাত্রই সে মস্ত্রের মতো আওড়াইতে লাগিল, “আমি কিছুই চাহিব না, চাহিব না, চাহিব না।’ ভোরের বেলায় সে বিছানা হইতে উঠিয়াই জোড়হাত করিয়া বসিল, এবং সমস্ত চিত্ত প্রয়োগ করিয়া কহিল, ‘আমি আমরণকাল তোমার সেবা করিব ; আর-কিছু চাহিব না, চাহিব না, চাহিব না।’ এই বলিয়া তাড়াতাড়ি মুখ-হাত ধুইয়া, বাসি কাপড় ছাড়িয়া নলিনাক্ষের সেই ক্ষুদ্র উপাসনা-ঘরের মধ্যে গেল ; নিজের আঁচলটি দিয়া সমস্ত ঘর মুছিয়া পরিষ্কার করিল এবং যথাস্থানে আসনটি বিছাইয়া রাখিয়া দ্রুতপদে গঙ্গাস্বান করিতে গেল । আজকাল নলিনাক্ষের একান্ত অনুরোধে ক্ষেমংকরী স্বর্যোদয়ের পূর্বে স্বান করিতে যাওয়া পরিত্যাগ করিয়াছেন। তাই উমেশকেই এই দুঃসহ শীতের ভোরে কমলার সহিত স্বানে যাইতে হইল । স্বান হইতে ফিরিয়া আসিয়া কমলা ক্ষেমংকরীকে প্রফুল্লমুখে প্রণাম করিল। তিনি তখন স্নানে বাহির হইবার উপক্রম করিতেছিলেন । কমলাকে কহিলেন, “এত ভোরে কেন নাহিতে গেলে ? অামার সঙ্গে গেলেই তো হইত ।” ساله কমলা কহিল, “আজ যে কাজ আছে মা । কাল সন্ধ্যাবেলায় যে তরকারি আনানো হইয়াছে তাহাই কুটিয়। রাখি ; আর যা-কিছু বাজার করা বাকি আছে, উমেশ সকাল-সকাল সারিয়া আস্থক ।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, “বেশ বুদ্ধি ঠাওরাইয়াছ মা । বেয়াই যেমনি আসিবেন আমনি খাবার প্রস্তুত পাইবেন ।” 、臀 এমন সময় নলিনাক্ষ বাহির হইয়া আসিবামাত্র কমলা ভিজা চুলের উপর তাড়াতাড়ি ঘোমটা টানিয়া ভিতরে ঢুকিয়া পড়িল । নলিনাক্ষ কহিল, “মা, আজই তুমি স্নান করিতে চলিলে ? সবে কাল একটু ভালো ছিলে।” ক্ষেমংকরী কহিলেন, "নলিন, তোর ডাক্তারি রাখ, । সকালবেলায় গঙ্গাস্নান না করিলেও লোকে অমর হয় না। তুই এখন বাহির হইতেছিল বুঝি ? একটু সকালসকাল ফিরিস ।” J নলিনাক্ষ জিজ্ঞাসা করিল, “কেন মা ?” ¢ዘoግ