পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি 8o속 এইরূপে হেমনলিনী নিমন্ত্রণে যাইবার জন্য হঠাৎ তাহার স্বভাববিরুদ্ধ অত্যন্ত উৎসাহ প্রকাশ করিল। এই উৎসাহের আতিশয্যে অন্নদাবাবু ভুলিলেন না, তাহার মন আরও উংকষ্ঠিত হইয়া উঠিল। হেমনলিনী তাড়াতাড়ি স্নান সারিয়া সজ্জিত হইয়া আসিয়া কহিল, “বাবা, গাড়ি আসিয়াছে কি ?” অন্নদাবাবু কহিলেন, “না, এখনো আসে নাই।” o ততক্ষণ হেমনলিনী বাগানের রাস্তায় পদচারণা করিয়া বেড়াইতে লাগিল । অন্নদাবাবু বারান্দায় বসিয়া মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন। অন্নদাবাবু যখন নলিনাক্ষের বাড়ি গিয়া পৌছিলেন বেলা তখন সাড়ে দশটার অধিক হইবে না। তখনো নলিনাক্ষ কাজ সারিয়া বাড়ি ফিরিয়া আসে নাই। কাজেই অন্নদাবাবুর অভ্যর্থনাভার ক্ষেমংকরীকেই লইতে হইল । ক্ষেমংকরী অন্নদাবাবুর শরীর ও সংসারের নানা কথা লইয়া প্রশ্ন ও আলোচনা উত্থাপিত করিলেন ; মাঝে মাঝে হেমনলিনীর মুখের দিকে র্তাহার কটাক্ষ ধাবিত হইল। সে মুখে কোনো উৎসাহের লক্ষণ নাই কেন ? আসন্ন শুভঘটনার সম্ভাবনা স্বর্যোদয়ের পূর্বে অরুণরশ্মিচ্ছটার মতো তাহার মুখে দীপ্তিবিকাশ করে নাই তো ! বরঞ্চ হেমনলিনীর অন্যমনস্ক দৃষ্টির মধ্য হইতে একটা ভাবনার অন্ধকার যেন দেখা যাইতেছিল । অল্পেই ক্ষেমংকরীকে আঘাত করে । হেমনলিনীর এইরূপ মানভাব লক্ষ্য করিয়া তাহার মন দমিয়া গেল। ‘নলিনের সঙ্গে বিবাহের সম্বন্ধ যে-কোনো মেয়ের পক্ষেই সৌভাগ্যের বিষয়, কিন্তু এই শিক্ষামদমত্তা মেয়েটি আমার নলিনকে কি তাহার যোগ্য বলিয়াই মনে করিতেছেন না ? এত চিন্তা, এত দ্বিধাই বা কিসের জন্য ? আমারই দোষ । বুড়া হইয় গেলাম, তবু ধৈর্য ধরিতে পারিলাম না। যেমনি ইচ্ছা হইলু আমনি আর সবুর সহিল না। বড়ে বয়সের মেয়ের সঙ্গে নলিনের বিবাহ স্থির করিলাম, অথচ তাহাকে ভালো করিয়া চিনিবার চেষ্টাও করিলাম না। হায় হায়, চিনিয়া দেখিবার মতো সময় যে হাতে নাই, এখন সংসারের সব কাজ তাড়াতাড়ি সারিয়া যাইবার জন্য তলব আসিয়াছে।’ অন্নদাবাবুর সঙ্গে কথা কহিতে কহিতে ক্ষেমংকরীর মনের ভিতরে ভিতরে এই সমস্ত চিন্তা ঘুরিয়া ঘুরিয়া বেড়াইতে লাগিল। কথাবার্তা কহা তাহার পক্ষে কষ্টকর হইয়া উঠিল। তিনি অন্নদাবাবুকে কহিলেন, “দেখুন, বিবাহের সম্বন্ধে বেশি তাড়াতাড়ি করিয়া কাজ নাই। এদের জনেরই বয়স হইয়াছে, এখন এরা নিজেরাই বিচার