পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 S8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আমি পরিপূর্ণ-হৃদয়ে তোমার নিকট হইতে প্রস্থান করিব— তোমাদের কল্যাণে, বিধাতার কল্যাণে, আমি অস্তরের মধ্যে এই বিদায়কালে যেন কিছুমাত্র দীনতা অতুভব না করি। তুমি সুখী হও, তোমার মঙ্গল হউক । আমাকে তুমি ঘৃণা করিয়ো না, আমাকে ঘৃণা করিবার কোনো কারণ তোমার নাই । অন্নদাবাবু চৌকিতে বসিয়া বই পড়িতেছিলেন। হঠাৎ হেমনলিনীকে দেখিয়া তিনি চমকিয়া উঠিলেন ; কহিলেন, “হেম, তোমার কি অস্থখ করিয়াছে ?” হেমনলিনী কহিল, “অসুখ করে নাই। বাবা, রমেশবাবুর একখানি চিঠি পাইয়াছি। এই লও, পড়া হইলে আবার আমাকে ফেরত দিয়ে৷ ” এই বলিয়া চিঠি দিয়া হেমনলিনী চলিয়া গেল। অন্নদাবাবু চশমা লইয়া চিঠিখানি বার-দুয়েক পড়িলেন ; তাহার পরে হেমনলিনীর নিকট ফেরত পাঠাইয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন । অবশেষে ভাবিয়া স্থির করিলেন, এ একপ্রকার ভালোই হইয়াছে। পাত্র হিসাবে রমেশের চেয়ে নলিনাক্ষ অনেক বেশি প্রার্থনীয়। ক্ষেত্র হইতে রমেশ যে আপনিই সরিয়া পড়িল, এ হইল ভালো । এই কথা ভাবিতেছেন, এমন-সময় নলিনাক্ষ আসিয়া উপস্থিত হইল । তাহাকে দেখিয়া অন্নদাবাবু একটু আশ্চর্য হইলেন। আজ পূর্বাহে নলিনাক্ষের সঙ্গে অনেক ক্ষণ দেখাসাক্ষাং হইয়াছে, আবার কয়েক ঘণ্টা যাইতে না যাইতেই সে কী মনে করিয়া আসিল ? বৃদ্ধ মনে মনে একটুখানি হাসিয়া স্থির করিলেন, হেমনলিনীর প্রতি নলিনাক্ষের মন পড়িয়াছে । কোনো ছুতা করিয়া হেমনলিনীর সহিত নলিনাক্ষের দেখা করাইয়া দিয়া নিজে সরিয়া যাইবেন কল্পনা করিতেছেন, এমন সময় নলিনাক্ষ কহিল, “অন্নদীবাবু, আমার সঙ্গে আপনার কন্যার বিবাহের প্রস্তাব উঠিয়াছে। কথাটা বেশি দূর অগ্রসর হইবার পূর্বে আমার যাহা বক্তব্য আছে, বলিতে ইচ্ছা করি।” 藝 অন্নদাবাবু কহিলেন, “ঠিক কথা, সে তো বলাই কর্তব্য ।” নলিনাক্ষ কহিল, “আপনি জানেন না, পূর্বেই আমার বিবাহ হইয়াছে।” অন্নদীবাবু কহিলেন, “জানি। কিন্তু—” নলিনাক্ষ । আপনি জানেন শুনিয়া আশ্চর্য হইলাম। কিন্তু তাহার মৃত্যু হইয়াছে, এইরূপ আপনি অনুমান করিতেছেন । নিশ্চয় করিয়া বলা যায় না। এমন-কি, তিনি বাচিয়া আছেন বলিয়া আমি বিশ্বাস করি। অন্নদাবাৰু কহিলেন, “ঈশ্বর করুন, তাহাই যেন সত্য হয়। হেম, হেম!”