পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি 8 S (t হেমনলিনী আসিয়া কহিল, “কী বাবা !” অন্নদাবাবু। রমেশ তোমাকে যে চিঠি লিথিয়াছেন, তাহার মধ্যে যে অংশটুকু— হেমনলিনী সেই চিঠিখানি নলিনাক্ষের হাতে দিয়া কহিল, “এ চিঠির সমস্তটাই উহার পড়িয়া দেখা কর্তব্য ।" এই বলিয়া হেমনলিনী চলিয়া গেল । চিঠিখনি পড়া শেষ করিয়া নলিনাক্ষ স্তব্ধ হইয়া বসিয়া রহিল। অন্নদীবাবু কহিলেন, “এমন শোচনীয় ঘটনা সংসারে প্রায় ঘটে না । চিঠিখানি পড়িতে দিয়া আপনার মনে আঘাত দেওয়া হইল, কিন্তু ইহা আপনার কাছে গোপন করাও আমাদের পক্ষে অন্যায় হইত।” নলিনাক্ষ একটুখানি চুপ করিয়া বসিয়া থাকিয়া অন্নদাবাবুর কাছে বিদায় লইয় উঠিল। চলিয়া যাইবার সময় উত্তরের বারান্দায় অদূরে হেমনলিনীকে দেখিতে পাইল । হেমনলিনীকে দেখিয়া নলিনাক্ষের মনে আঘাত লাগিল । ওই-ষে নারী স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া, উহার স্থির-শাস্ত মূর্তিটি উহার অন্তঃকরণকে কেমন করিয়া বহন করিতেছে ? এই মুহূর্তে উহার মন যে কী করিতেছে তাহা ঠিকমতো জানিবার কোনো উপায় নাই ; নলিনাক্ষকে তাহার কোনো প্রয়োজন আছে কি না সে প্রশ্নও করা যায় না, তাহার উত্তর পাওয়াও কঠিন । নলিনাক্ষের পীড়িত চিত্ত ভাবিতে লাগিল, ইহাকে কোনো সাম্বনা দেওয়া যায় কি না । কিন্তু মাতুষে মানুষে কী দুর্ভেদ্য ব্যবধান ! মন জিনিসটা কী ভয়ংকর একাকী ! নলিনাক্ষ একটু ঘুরিয়া ওই বারান্দার সামনে দিয়া গাড়িতে উঠিবে স্থির করিল, মনে করিল যদি হেমনলিনী তাহাকে কোনো কথা জিজ্ঞাসা করে ; বারান্দার সম্মুখে যখন আসিল, দেগিল, হেমনলিনী বারান্দা ছাড়িয়া ঘরের মধ্যে সরিয়া গেছে । হৃদয়ের সহিত হৃদয়ের সাক্ষাৎ সহজ নহে, মানুষের সহিত মানুষের সম্বন্ধ সরল নহে, এই কথা চিন্তা করিয়া ভারাক্রান্তচিত্তে নলিনাক্ষ গাড়িতে উঠিল । নলিনাক্ষ চলিয়া গেলে যোগেন্দ্র আসিয়া উপস্থিত হইল। অন্নদাবাবু জিজ্ঞাসা করিলেন, “কী যোগেন, একলা ষে ?” যোগেন্দ্ৰ কহিল, “দ্বিতীয় আর কোন ব্যক্তিকে প্রত্যাশা করিতেছ শুনি ?” অন্নদা কহিলেন, “কেন ? রমেশ ?” যোগেন্দ্র । তাহার প্রথম দিনের অভ্যর্থনাটাই কি ভদ্রলোকের পক্ষে যথেষ্ট হয় নাই। কাশীর গঙ্গায় ঝাপ দিয়া মরিয়া যদি তাহার শিবত্বলাভ না হইয়া থাকে, তবে আর কী হইয়াছে আমি নিশ্চয় জানি না। কাল হইতে এ পর্যন্ত তাহার