পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী פא צ8 আর দেখা নাই, টেবিলে একখানা কাগজে লেখা আছে— ‘পালাই— তোমার রমেশ। এ-সব, কবিত্ব আমার কোনোকালে অভ্যাস নাই। স্বতরাং আমাকেও এখান হইতে পালাইতে হইল, আমার হেডমাস্টারিই ভালো, তাহাতে সমস্তই খুব স্পষ্ট— ঝাপসা কিছুই নাই । অন্নদাবাবু কহিলেন, “হেমের জন্য তো একটা-কিছু স্থির—” যোগেন্দ্র। আর কেন ? আমিই কেবল স্থির করিব, আর তোমরা অস্থির করিতে থাকিবে, এ খেলা বেশি দিন ভালো লাগে না। আমাকে আর-কিছুতে জড়াইয়ো না— আমি যাহা ভালো বুঝিতে পারি না, সেটা আমার ধাতে সয় না। হঠাৎ দুর্বোধ হইয়া পড়িবার যে আশ্চর্য ক্ষমতা হেমের আছে, সেটা আমাকে কিছু কাবু করে। কাল সকালের গাড়িতে আমি বিদায় হইব, পথে বঁকিপুরে আমার কাজ আছে। অন্নদাবাবু চুপ করিয়া বসিয়া নিজের মাথায় হাত বুলাইতে লাগিলেন। সংসারের সমস্তা আবার দুরূহ হইয়া আসিয়াছে। Q9e শৈলজা এবং তাহার পিতা নলিনাক্ষের বাড়িতে আসিয়াছেন। শৈলজা কমলাকে লইয়া একটা কোণের ঘরে বসিয়া ফিসফিস্ করিতেছিল, চক্রবর্তী ক্ষেমংকরীর সঙ্গে আলাপ করিতেছিলেন । চক্রবর্তী। আমার তো ছুটি ফুরাইয়া আসিল, কালই গাজিপুরে যাইতে হইবে। যদি হরিদাসী আপনাদের কোনোরকমে বিরক্ত করিয়া থাকে, বা যদি আপনাদের পক্ষে— ক্ষেমংকরী। ও আবার কী রকম কথা চক্রবর্তীমশায় ? আপনার মনের ভাবটা কী শুনি। আপনি কি কোনো ছুতা করিয়া আপনাদের মেয়েটিকে ফিরাইয়া লইতে চান ? চক্রবর্তী। আমাকে তেমন লোক পান নাই। আমি দিয়া ফিরাইয়া লইবার পাত্র নই, কিন্তু যদি আপনার কিছুমাত্র অস্ববিধা হয়— ক্ষেমংকরী । চক্রবর্তীমশায়, ওটা আপনার সরল কথা নয়— মনে মনে বেশ জানেন, হরিদাসীর মতো অমন লক্ষ্মী মেয়েটিকে কাছে রাখিলে স্থবিধার সীমা নাই, তবু— চক্রবর্তী। না না, আর বলিতে হইবে না, আমি ধরা পড়িয়া গেছি। ওটা একটা ছলমাত্ৰ— আপনার মুখে হরিদাসীর গুণ শুনিবার জন্তই কথাটা আমার পাড়া ।