পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8〉br রবীন্দ্র-রচনাবলী њи শিক্ষাদীক্ষণ আমাদের সমাজের সঙ্গে মেলে না। তাই ভাবিতেছিলাম, হয়তো ক্ষেমংকরী। সে আর আমি বুঝি না ? সে হইলে ভাবনা ছিল বৈকি। কিন্তু সে বিবাহ হইবে না— চক্রবর্তী। সম্বন্ধ ভাঙিয়া গেছে ? ক্ষেমংকরী। গড়েই নি, তার ভাঙিবে কী । নলিনের একেবারেই ইচ্ছা ছিল না, আমিই জেদ করিতেছিলাম। কিন্তু সে জেদ ছাড়িয়াছি । যাহা হইবার নয় তাহা জোর করিয়া ঘটাইয়া মঙ্গল নাই । ভগবানের কী ইচ্ছা জানি না, মরিবার পূর্বে বুঝি আর বউ দেখিয়া যাইতে পারিলাম না। চক্রবর্তী। অমন কথা বলিবেন না। আমরা আছি কী করিতে ? ঘটক-বিদায় এবং মিষ্টান্ন-আদায় না করিয়া ছাড়িব বুঝি ? ক্ষেমংকরী। আপনার মুখে ফুলচন্দন পড়ুক চক্রবর্তীমশায় । আমার মনে বড়ো দুঃখ আছে যে, নলিন এই বয়সে আমারই জন্যে সংসারধর্মে প্রবেশ করিতে পারিল না। তাই আমি বড়ো ব্যস্ত হইয়া সকল দিক না ভাবিয়া একটা সম্বন্ধ করিয়া বসিয়াছিলাম — সে আশা ত্যাগ করিয়াছি, কিন্তু আপনারা একটা দেখিয়া দিন । দেরি করিবেন না— আমি বেশি দিন বাচিব না। চক্রবর্তী। ও কথা বলিলে শুনিব কেন । আপনাকে বাচিতেও হইবে, বউয়েরও মুখ দেখিবেন । আপনার যেরকম বউটি দরকার, সে আমি ঠিক জানি ; নিতান্ত কচি হইলেও চলিবে না, অথচ আপনাকে ভক্তিশ্রদ্ধা করিবে, বাধ্য হইয়া চলিবে— এ নহিলে আমাদের পছন্দ হইবে না। তা, সে আপনি কিছুই ভাবিবেন না, ঈশ্বরের কৃপায় নিশ্চয়ই সে ঠিক হইয়াই আছে। এখন যদি অনুমতি করেন, একবার হরিদাসীকে তার কর্তব্যসম্বন্ধে দু-চারটে কথা উপদেশ করিয়া আসি, অমনি শৈলকেও এখানে পাঠাইয়া দিই— আপনাকে দেখিয়া অবধি আপনার কথা তাহার মুখে আর ধরে না | ক্ষেমংকরী কহিলেন, “না, আপনারা তিন জনেই এক ঘরে গিয়া বসুন, অামার একটু কাজ আছে।” চক্রবর্তী হাসিয়া কহিলেন, “জগতে আপনাদের কাজ আছে বলিয়াই আমাদের কল্যাণ। কাজের পরিচয় নিশ্চয়ই যথাসময়ে পাওয়া যাইবে । নলিনাক্ষবাবুর বধূর কল্যাণে ব্রাহ্মণের ভাগ্যে মিষ্টাল্পের পালা শুরু হউক ।” চক্রবর্তী, শৈল ও কমলার কাছে আসিয়া দেখিলেন, কমলার দুটি চক্ষু চোখের