পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নৌকাডুবি 8هلا জলের আভাসে এখনো ছলছল করিতেছে। চক্রবর্তী শৈলজার পাশে বসিয়া নীরবে তাহার মুখের দিকে একবার চাহিলেন। শৈল কহিল, “বাবা, আমি কমলকে বলিতেছিলাম যে, নলিনাক্ষবাবুকে সকল কথা খুলিয়া বলিবার এখন সময় হইয়াছে, তাই লইয়া তোমার এই নির্বোধ হরিদাসী আমার সঙ্গে ঝগড়া করিতেছে।” কমলা বলিয়া উঠিল, “না দিদি, না, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, তুমি এমন কথা মুখে আনিয়ে না। সে কিছুতেই হইবে না।” শৈল কহিল, "কী তোমার বুদ্ধি ! তুমি চুপ করিয়া থাক, আর হেমনলিনীর সঙ্গে নলিনাক্ষবাবুর বিবাহ হইয়া যাক। বিবাহের পরদিন হইতে আর আজ পর্যস্ত কেবলই তো যত রাজ্যের অঘটন-ঘটনার মধ্যে পাক খাইয়া মরিলি, আবার আরএকটা নূতন অনাস্থষ্টির দরকার কী ?” 曾 কমলা কহিল, “দিদি, আমার কথা কাহাকেও বলিবার নয়, আমি সব সহিতে পারিব, সে লজ্জা সহিতে পারিব না। আমি যেমন আছি বেশ আছি, আমার কোনো দুঃখ নাই, কিন্তু যদি সব কথা প্রকাশ করিয়া দাও তবে আমি কোন মুখে আর এক-দণ্ড এ বাড়িতে থাকিব ? তবে আমি বঁচিব কেমন করিয়া ? শৈল এ কথার কোনো উত্তর দিতে পারিল না, কিন্তু তাই বলিয়া হেমনলিনীর সঙ্গে নলিনাক্ষের বিবাহ হইয়া যাইবে ইহা চুপ করিয়া সহ করা তাহার পক্ষে বড়ো কঠিন। চক্রবর্তী কহিলেন, “যে বিবাহের কথা বলিতেছ সেটা ঘটিতেই হইবে, এমন কী কথা আছে ।” த শৈল । বল কী বাবা, নলিনাক্ষবাবুর মা যে আশীর্বাদ করিয়া আসিয়াছেৰু। চক্রবর্তী । বিশ্বেশ্বরের আশীর্বাদে সে আশীৰ্বাদ ফাসিয়া গেছে । মা কমল, তোমার কোনো ভয় নাই, ধর্ম তোমার সহায় আছেন । কমলা সব কথা স্পষ্ট না বুঝিয়া দুই চক্ষু বিস্ফারিত করিয়া খুড়ামশায়ের মুখের দিকে চাহিয়া রহিল। তিনি কহিলেন, “সে বিবাহের সম্বন্ধ ভাঙিয়া গেছে। এ বিবাহে নলিনাক্ষবাবুও রাজি নহেন এবং উহার মার মাথায়ও স্ববুদ্ধি আসিয়াছে।” শৈলজা ভারি খুশি হইয়া কহিল, "বাচা গেল বাবা । কাল এই খবরটা শুনিয়া রাত্রে আমি ঘুমাইতে পারি নাই। কিন্তু সে যাই হোক, কমল কি নিজের ঘরে চিরদিন এমনি পরের মতো কাটাইবে ? কবে সব পরিষ্কার হইয়া যাইবে ?” o: চক্রবর্তী। ব্যস্ত হোস কেন শৈল ? যখন ঠিক সময় আসিবে তখন সমস্ত সহজ হইয়া যাইবে। *