পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وكاج 8 ঈশ্বর তাহার চারি দিক হইতে সমস্ত কুয়াশা কাটিয়া দিতেছেন। আপনি তাহাকে পরম সংকটের সময় যেমন রক্ষা করিয়াছেন, তাহার জন্য যে বিষম দুঃখ আপনাকে স্বীকার করিতে হইয়াছে, তাহাতে আপনার সঙ্গে সম্বন্ধ ছেদনের সময় কোনো কথা না বলিয়া কমলা বিদায় লইতে পারে না। আপনার কাছে ও আজ আশীৰ্বাদ লইতে আসিয়াছে।” রমেশ ক্ষণকাল চুপ করিয়া থাকিয়া সবলে রুদ্ধ কণ্ঠ পরিষ্কার করিয়া লইয়া কহিল, “তুমি স্বধী হও কমলা— আমি না জানিয়া এবং জানিয়া তোমার কাছে বা-কিছু অপরাধ করিয়াছি, সব মাপ করিয়ো ।” কমলা ইহার উত্তরে কিছুই বলিতে পারিল না, দেওয়াল ধরিয়া দাড়াইয়া রহিল। রমেশ কিছুক্ষণ পরে কহিল, “যদি কাহাকেও কিছু বলিবার জন্য, কোনো বাধা দূর করিবার জন্য, আমাকে তোমার প্রয়োজন থাকে তো বলে ।” কমলা জোড়হাত করিয়া কহিল, “আমার কথা কাহারও কাছে বলিবেন না, আমার এই মিনতি রাখিবেন।” রমেশ কহিল, “অনেক দিন তোমার কথা কাহারও কাছে বলি নাই, খুব গোলমালে পড়িলেও চুপ করিয়া কাটাইয়াছি। অল্পদিন হইল, যখন মনে করিয়াছিলাম তোমার কথা বলিলে তোমার কোনো ক্ষতি হইবে না, তখনই কেবল একটি পরিবারের কাছে তোমার কথা প্রকাশ করিয়াছি । তাহাতেও বোধ হয় তোমার অনিষ্ট না হইয়া ভালোই হইতে পারে। খুড়ামশায় বোধ হয় খবর পাইয়া থাকিবেন—অন্নদাবাবু, র্যাহার মেয়ের সঙ্গে—” খুড়া কহিলেন, “হেমনলিনী, জানি বৈকি। র্তাহারা সব শুনিয়াছেন ?” রমেশ কহিল, “হঁ। তাহদের কাছে আর কিছু বলা যদি প্রয়োজন বোধ করেন তবে আমি যাইতে পারি— কিন্তু আমার আর ইচ্ছা নাই— আমার অনেক সময় গেছে এবং আরও আমার অনেক গেছে, এখন আমি মুক্তি চাই— হাত-নাগাদ সমস্ত দেনা-পাওনা শোধ করিয়া দিয়া এখন বাহির হইতে পারিলে বাচি ।” খুড়া রমেশের হাত ধরিয়া সস্নেহকণ্ঠে কহিলেন, “না রমেশবাবু, আপনাকে আর কিছুই করিতে হইবে না। আপনাকে অনেক বহন করিতে হইয়াছে, এখন ভারমুক্ত হইয়া নিজেকে স্বাধীনভাবে চালনা করুন, সুখী হউন, সার্থক হউন, এই আমার আশীৰ্বাদ !” যাইবার সময় রমেশ কমলার দিকে চাহিয়া কহিল, “আমি তবে চলিলাম।” কমলা কোনো কথা না কহিয়া আর-একবার ভূতলে মাথা ঠেকাইয়া রমেশকে প্রণাম করিল।