পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ 88 S মা ভৈ মৃত্যু একট। প্রকাগু কালে কঠিন কষ্টিপাথরের মতে । ইহারই গায়ে কবিয়া সংসারের সমস্ত খাটি পরীক্ষণ হইয়া থাকে । তুমি দেশকে যথার্থ ভালোবাস, তাহার চরম পরীক্ষা তুমি দেশের জন্য মরিতে পার কি না । তুমি আপনাকে যথার্থ ভালোবাস, তাহারও চরম পরীক্ষা আপনার উন্নতির জন্য প্রাণ বিসর্জন করা তোমার পক্ষে সম্ভবপর কি না । এমন একটা বিশ্বব্যাপী সার্বজনীন ভয় পৃথিবীর মাথার উপরে যদি না ঝুলিত, তবে সত্য-মিথ্যাকে, ছোটে-বড়ো-মাঝারিকে বিশুদ্ধভাবে তুলা করিয়া দেখিবার কোনো উপায় থাকিত না । এই মৃত্যুর তুলায় যে-সব জাতির তৌল হইয়া গেছে তাহারা পাস-মার্ক পাইয়াছে। তাহারা আপনাদিগকে প্রমাণ করিয়াছে, নিজের কাছে ও পরের কাছে তাহীদের আর কিছুতেই কুষ্ঠিত হইবার কোনে কারণ নাই । মৃত্যুর দ্বারাই তাহদের জীবন পরীক্ষিত হইয়া গেছে । ধনীর যথার্থ পরীক্ষা দানে ; যাহার প্রাণ অাছে তাহার যথার্থ পরীক্ষা প্রাণ দিবার শক্তিতে । যাহার প্রাণ নাই বলিলেই হয় সেই মরিতে কৃপণতা করে । ষে মরিতে জানে স্বখের অধিকার তাহারই ; ষে জয় করে ভোগ করা তাহাকেই সাজে। যে লোক জীবনের সঙ্গে স্থখকে বিলাসকে দুই হাতে অঁাকড়িয়া থাকে, সুখ তাহার সেই স্কৃণিত ক্রীতদাসের কাছে নিজের সমস্ত ভাণ্ডার খুলিয়া দেয় না ; তাহাকে উচ্ছিষ্টমাত্ৰ দিয়া স্বারে ফেলিয়া রাখে। আর মৃত্যুর আহবানমাত্র যাহার। তুড়ি মারিয়া চলিয়া যায়, চির-আদৃত স্থখের দিকে একবার পিছন ফিরিয়া তাকায় না, স্থখ তাহাদিগকে চায়, সুখ তাহারাই জানে। যাহারা সবলে ত্যাগ করিতে পারে তাহারাই প্রবলভাবে ভোগ করিতে পারে । যাহারা মরিতে জানে না তাহদের ভোগবিলায্যের দীনতা-কৃশতা-ঘৃণ্যতা গাড়িজুড়ি এবং তকমা-চাপরাসের দ্বারা ঢাকা পড়ে না । ত্যাগের বিলাসবিরল কঠোরতার মধ্যে পৌরুষ আছে, যদি স্বেচ্ছায় তাহ বরণ করি তবে নিজেকে লজ্জল হইতে বাচাইতে পারিব । এই দুই রাস্তা আছে– এক ক্ষত্রিয়ের রাস্তা, আর-এক ব্রাহ্মণের রাস্তা। যাহার মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে পৃথিবীর স্থখসম্পদ তাহদেরই। যাহারা জীবনের স্থখকে অগ্রাহ করিতে পারে তাহদের আনন্দ মুক্তির। এই দুয়েতেই পৌরুষ।