পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ 8&S, র্ভর করিবার জো নাই ? যদি তাহা সত্য হয় তবে ডবল দাম দিলেও এমন-সকল লোককে টিকিট বেচিতে নাই। এ তো আদালতের কাছে সাক্ষ্য দেওয়া নয় যে, প্রত্যেক কথাটাকে হলফ করিয়া প্রমাণ করিতে হইবে । যাহারা বিশ্বাস করিবার জন্য, আনন্দ করিবার জন্য আসিয়াছে, তাহাদিগকে এত ঠকাইবার আয়োজন কেন ? তাহারা নিজের কল্পনাশক্তি বাড়িতে চাৰিবন্ধ করিয়া আসে নাই। কতক তুমি বোঝাইবে কতক তাহারা বুঝিবে, তোমার সহিত তাহাদের এইরূপ আপোষের সম্বন্ধ । Муъ দুন্যস্ত গাছের গুড়ির আড়ালে দাড়াইয়া সর্থীদের সহিত শকুন্তলার কথাবার্তা শুনিতেছেন। অতি উত্তম । কথাবার্তা বেশ রসে জমাইয়া বলিয়া যাও। আস্ত গাছের গুড়িটা আমার সম্মুখে উপস্থিত না থাকিলেও সেটা আমি ধরিয়া লইতে পারি— এতটুকু স্বজনশক্তি আমার আছে। দুন্যস্ত-শকুন্তলা অনস্বয়া-প্রিয়ংবদার চরিত্রান্নুরূপ প্রত্যেক হাবভাব এবং কণ্ঠস্বরের প্রত্যেক ভঙ্গী একেবারে প্রত্যক্ষবং অনুমান করিয়া লওয়া শক্ত, সুতরাং সেগুলি যখন প্রত্যক্ষ বর্তমান দেখিতে পাই তখন হৃদয় রসে অভিষিক্ত হয় ; কিন্তু দুটো গাছ বা একটা ঘর বা একটা নদী কল্পনা করিয়া লওয়া কিছুই শক্ত নয়-– সেটাও আমাদের হাতে না রাথিয়া চিত্রের দ্বারা উপস্থিত করিলে আমাদের প্রতি ঘোরতর অবিশ্বাস প্রকাশ করা হয়। আমাদের দেশের যাত্রা আমার ওইজন্য ভালো লাগে। যাত্রার অভিনয়ে দর্শক ও অভিনেতার মধ্যে একটা গুরুতর ব্যবধান নাই। পরস্পরের বিশ্বাস ও আনুকূল্যের প্রতি নির্ভর করিয়া কাজটা বেশ সহৃদয়তার সহিত স্বসম্পন্ন হইয়া উঠে । কাব্যরস, যেটা আসল জিনিস, সেইটেই অভিনয়ের সাহায্যে ফোয়ারার মতো চারিদিকে দর্শকদের পুলকিত চিত্তের উপর ছড়াইয়া পড়ে। মালিনী যখন তাহার পুষ্পবিরল বাগানে ফুল খুজিয়া বেলা করিয়া দিতেছে তখন সেটাকে সপ্রমাণ করিবার জন্য আসরের মধ্যে আস্ত আস্ত গাছ আনিয়া ফেলিবার কী দরকার আছে— একা মালিনীর মধ্যে সমস্ত বাগান আপনি জাগিয়া উঠে । তাই যদি না হইবে তবে মালিনীরই বা কী গুণ, আর দর্শকগুলোই বা কাঠের মূর্তির মতে কী করিতে বসিয়া আছে ? J শকুন্তলার কবিকে যদি রঙ্গমঞ্চে দৃশুপটের কথা ভাবিতে হইত, তবে তিনি গোড়াতেই মৃগের পশ্চাতে রথ ছোটানো বন্ধ করিতেন। অবশু, তিনি বড়ো কবি— রথ বন্ধ হইলেও যে র্তাহার কলম বন্ধ হইত তাহা নহে ; কিন্তু আমি বলিতেছি, যেটা তুচ্ছ তাহার জন্য যাহা বড়ে তাহা কেন নিজেকে কোনো অংশে খর্ব করিতে যাইবে ? ভাবুকের চিত্তের মধ্যে রঙ্গমঞ্চ আছে, সে রঙ্গমঞ্চে স্থানাভাব নাই।