পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ । 8& 4 নাই। উপর হইতেই চটু করিয়া যে স্থখ পাওয়া যায়, ইহা তাহা, অপেক্ষ স্থায়ী ও গভীর । هيد" এবং এক হিসাবে তাহ অপেক্ষা ব্যাপক। বাহা অগভীর, লোকের শিক্ষাবিস্তারের সঙ্গে, অভ্যাসের সঙ্গে ক্রমেই তাহা ক্ষয় হইয় তাহার রিক্ততা বাহির হইয়া পড়ে। যাহা গভীর তাহ আপাতত বহুলোকের গম্য না হইলেও বহুকাল তাহান্ন পরমায়ু থাকে, তাহার মধ্যে যে একটি শ্রেষ্ঠতার আদর্শ আছে তাহ সহজে জীর্ণ হয় না। জয়দেবের “ললিতলবঙ্গলতা’ ভালো বটে, কিন্তু বেশিক্ষণ নহে। ইন্দ্রিয় তাহাকে মন-মহারাজের কাছে নিবেদন করে, মন তাহাকে একবার স্পর্শ করিয়াই রাখিয়া দেয়— তখন তাহ ইঞ্জিয়ের ভোগেই শেষ হইয়া যায়। ‘ললিতলবঙ্গলতা’র পার্থে কুমারসম্ভবের একটা শ্লোক ধরিয়া দেখা যাক— আবর্জিতা কিঞ্চিদিব স্তনাভ্যাং বাসে বসান তরুণার্করাগম । পর্যাপ্তপুষ্পস্তবকাবনম্র সঞ্চারিণী পল্পবিনী লতেব । ছন্দ আলুলায়িত নহে, কথাগুলি যুক্তাক্ষরবহুল ; তবু ভ্রম হয়, এই শ্লোক 'ললিতলবঙ্গলতা’র অপেক্ষা কানেও মিষ্ট শুনাইতেছে। কিন্তু তাহা ভ্ৰম । মন নিজের স্বজনশক্তির দ্বারা ইঞ্জিয়ন্থখ পূরণ করিয়া দিতেছে। যেখানে লোলুপ ইন্দ্রিয়গণ ভিড় করিয়া না দাড়ায় সেইখানেই মন এইরূপ স্বজনের অবসর পায় । ‘পর্যাপ্তপুষ্পস্তবকাবনম্রা’— ইহার মধ্যে লয়ের ষে উত্থান আছে, কঠোরে কোমলে যথাযথরুপে মিশ্রিত হইয়া ছন্দকে যে দোলা দিয়াছে, তাহা জয়দেবী লয়ের মতো অতিপ্রত্যক্ষ নহে; তাহ নিগৃঢ় ; মন তাহ আলস্তভরে পড়িয়া পায় না, নিজে আবিষ্কার করিয়া লইয়া খুশি হয়। এই শ্লোকের মধ্যে যে-একটি ভাবের সৌন্দর্য তাহাও আমাদের মনের সহিত চক্রান্ত করিয়া অশ্রুতিগম্য একটি সংগীত রচনা করে , সে সংগীত সমস্ত শব্দসংগীতকে ছাড়াইয়া চলিয়া যায় ; মনে হয়, যেন কান জুড়াইয়া গেল— কিন্তু কান জুড়াইবার কথা নহে, মানসী মায়ায় কানকে প্রতারিত করে। । আমাদের এই মায়াবী মনটিকে স্বজনের অবকাশ না দিলে, সে কোনো মিষ্টতাকেই বেশিক্ষণ মিষ্ট বলিয়া গণ্য করে না। সে উপযুক্ত উপকরণ পাইলে কঠোর ছন্দকে ললিত, কঠিন শব্দকে কোমল করিয়া তুলিতে পারে। সেই শক্তি খাটাইবার জন্য সে কবিদের কাছে অনুরোধ প্রেরণ করিতেছে । । i