পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ r 8® ዓ এই ব্যাঙের ডাক নববর্ষার মত্তভাবের সঙ্গে নহে, ঘনবর্ষার নিবিড় ভাবের সঙ্গে বড়ো চমৎকার খাপ খায়। মেঘের মধ্যে আজ কোনো বর্ণ বৈচিত্র্য নাই, স্তরবিন্যাস নাই ; শচীর কোনো প্রাচীন কিংকরী আকাশের প্রাঙ্গণ মেঘ দিয়া সমান করিয়া লেপিয়া দিয়াছে, সমস্তই কৃষ্ণধূসরবর্ণ। নানাশস্তবিচিত্রা পৃথিবীর উপরে উজ্জল আলোকের তুলিকা পড়ে নাই বলিয়া বৈচিত্র্য ফুটিয়া ওঠে নাই। ধানের কোমল মন্থণ সবুজ, পাটের গাঢ় বর্ণ এবং ইক্ষুর হরিত্রাভা একটি বিশ্বব্যাপীকালিমায় মিশিয়া আছে। বাতাস নাই। আসন্ন বৃষ্টির আশঙ্কায় পঙ্কিল পথে লোক বাহির হয় নাই। মাঠে বহুদিন পূর্বে খেতের কাজ সমস্ত শেষ হইয়া গেছে। পুকুরে পাড়ির সমান জল। এইরূপ জ্যোতিহীন, গতিহীন, কর্মহীন, বৈচিত্র্যহীন, কালিমালিপ্ত একাকারের দিনে ব্যাঙের ডাক ঠিক স্বরটি লাগাইয়া থাকে। তাহার সুর ওই বর্ণহীন মেঘের মতে, এই দীপ্তিশূন্ত আলোকের মতে, নিস্তব্ধ নিবিড় বর্ষাকে ব্যাপ্ত করিয়া দিতেছে ; বর্ষার গণ্ডিকে আরও ঘন করিয়া চারি দিকে টানিয়া দিতেছে। তাহা নীরবতার অপেক্ষাও একঘেয়ে। তাহ নিভৃত কোলাহল । ইহার সঙ্গে ঝিল্লীরব ভালোরূপ মেশে। কারণ যেমন মেঘ, যেমন ছায়া, তেমনি ঝিল্লীরবও আর-একটা আচ্ছাদনবিশেষ ; তাহা স্বরমণ্ডলে অন্ধকারের প্রতিরূপ ; তাহা বর্ষানিশীথিনীকে সম্পূর্ণতা দান করে। ভাদ্র ১৩০৮ বাজে কথা অন্ত খরচের চেয়ে বাজে খরচেই মানুষকে যথার্থ চেনা যায়। কারণ, মানুষ ব্যয় করে বাধা নিয়ম অনুসারে, অপব্যয় করে নিজের খেয়ালে । যেমন বাজে খরচ, তেমনি বাজে কথা। বাজে কথাতেই মানুষ আপনাকে ধরা দেয়। উপদেশের কথা যে রাস্ত দিয়া চলে, মন্থর আমল হইতে তাহ বাধা ; কাজের কথা যে পথে আপনার গোষান টানিয়া আনে লৈ পথ কেজো সম্প্রদায়ের পায়ে পায়ে তৃণপুস্পশূন্ত চিহ্নিত হইয়া গেছে। বাজে কথা নিজের মতো করিয়াই বলিতে হয়। এইজন্ত চাণক্য ব্যক্তিবিশেষকে যে একেবারে চুপ করিয়া যাইতে বলিয়াছেন, সেই কঠোর বিধানের কিছু পরিবর্তন করা যাইতে পারে। আমাদের বিবেচনায় চাণক্যকথিত