পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8や● রবীন্দ্র-রচনাবলী বীক্ষ্য মধুরাংশ্চ নিশম্য শকান মন অকারণ বিরহে বিকল হইয় উঠে, কালিদাস অন্যত্র তাহা স্বীকার করিয়াছেন। আষাঢ়ের প্রথম দিনে অকস্মাং ঘনমেঘের ঘটা দেখিলে আমাদের মনে এক স্বষ্টিছাড়া বিরহ জাগিয়া উঠে, মেঘদূত সেই অকারণ বিরহের অমূলক প্ৰলাপ। তা যদি না হইত, তবে বিরহী মেঘকে ছাড়িয়া বিদ্যুৎকে দূত পাঠাইত। তবে পূর্বমেঘ এত রহিয়া বসিয়া, এত ঘুরিয়া ফিরিয়া, এত যুখীবন প্রফুল্প করিয়া, এত জনপদবধূর উংক্ষিপ্ত দৃষ্টির কটাক্ষপাত লুটিয়া লইয়া চলিত না। কাব্য পড়িবার সময়ও যদি হিসাবের খাতা খুলিয়া রাখিতেই হয়, যদি কী লাভ করিলাম হাতে হাতে তাহার নিকাশ চুকাইয়া লইতেই হয়, তবে স্বীকার করিব মেঘদূত হইতে আমরা একটি তথ্য লাভ করিয়া পুলকিত হইয়াছি। সেটি এই যে, তখনো মাতুষ ছিল এবং তখনে আষাঢ়ের প্রথম দিন যথানিয়মে আসিত । কিন্তু অসহিষ্ণু বররুচি যাহাঁদের প্রতি অশিষ্ট বিশেষণ প্রয়োগ করিয়াছেন তাহার কি এরূপ লাভকে লাভ বলিয়াই গণ্য করিবেন ? ইহাতে কি জ্ঞানের বিস্তার, দেশের উন্নতি, চরিত্রের সংশোধন ঘটিবে ? অতএব, যাহা অকারণ, যাহা অনাবশ্বক, হে চতুরানন, তাহ রসের কাব্যে রসিকদের জন্যই ঢাকা থাকুক— যাহা আবশ্বক, যাহা হিতকর, তাহার ঘোষণার বিরতি ও তাহার খরিদদারের অভাব হইবে না। আশ্বিন ১৩০৯ পনেরো-আন। যে লোক ধনী, ঘরের চেয়ে তাহার বাগান বড়ো হইয়া থাকে। ঘর অত্যাবস্তক ; বাগান অতিরিক্ত, না হইলেও চলে। সম্পদের উদারতা অনাবশ্বকেই আপনাকে সপ্রমাণ করে। ছাগলের যতটুকু শিং আছে তাহাতে তাহার কাজ চলিয়া যায়, কিন্তু হরিণের শিঙের পনেরো-আনা অনাবশ্বকত দেখিয়া আমরা মুগ্ধ হইয়া থাকি। ময়ূরের লেজ যে কেবল রঙচঙে জিতিয়াছে তাহা নহে, তাহার বাহুল্যগৌরবে শালিক-খঞ্জন-ফিঙার পুচ্ছ লজ্জায় অহরহ অস্থির। বে মানুষ আপনার জীবনকে নিঃশেষে অত্যাবগুক করিয়া তুলিয়াছে সে ব্যক্তি আদর্শপুরুষ সন্দেহ নাই, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তাহার আদর্শ অধিক লোকে অনুসরণ করে না ; যদি করিত তবে মনুষ্কসমাজ এমন একটি ফলের মতো হইয়া উঠিত