পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8や8 顧 রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রসন্ন স্নিগ্ধতার দ্বারা কোমল করিয়া লইতেছে। বোধ করি ঘাসজাতির মধ্যে কুশতৃণ গায়ের জোরে ধান্ত হইবার চেষ্টা করিয়াছিল ; বোধ করি সামান্ত ঘাস হইয়া না থাকিবার জন্য, পরের প্রতি একান্ত মনোনিবেশ করিয়া জীবনকে সার্থক করিবার জন্য তাহার মধ্যে অনেক উত্তেজনা জন্মিয়াছিল ; তবু সে ধান্ত হইল না। কিন্তু সর্বদা পরের প্রতি তাহার তীক্ষ লক্ষ নিবিষ্ট করিবার একাগ্র চেষ্টা কিরূপ তাহা পরই বুঝিতেছে। মোটের উপর এ কথা বলা যাইতে পারে যে, এরূপ উগ্র পরগরায়ণতা বিধাতার অভিপ্রেত নহে। ইহা অপেক্ষ সাধারণ তৃণের খ্যাতিহীন স্নিগ্ধসুন্দর বিনম্র-কোমল নিস্ফলতা ভালো। সংক্ষেপে বলিতে গেলে মানুষ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত— পনেরো-আনা এবং বাকি এক-আনা । পনেরো-আনা শাস্ত এবং এক-আনা অশাস্ত । পনেরো-আনা অনাবশ্বক এবং এক-আনা আবশ্বক। বাতাসে চলনশীল জলনধর্মী অক্সিজেনের পরিমাণ অল্প, স্থির শান্ত নাইট্রোজেনই অনেক। যদি তাহার উলটা হয় তবে পৃথিবী জলিয়া ছাই হয়। তেমনি সংসারে যখন কোনো এক-দল পনেরো-আনা এক-আনার মতোই অশাস্ত ও আবশ্বক হইয়া উঠিবার উপক্রম করে তখন জগতে আর কল্যাণ নাই, তখন যাহাঁদের অদৃষ্টে মরণ আছে তাহাদিগকে মরিবার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে। মাঘ ১৩০৯ নববর্ষ। যৌবনে নিজের অস্ত পাই নাই, সংসারেরও অস্ত ছিল না। আমি কী ষে হইৰ ন হইব, কী করিতে পারি না পারি, কাজে ভাবে অমুভাবে আমার প্রকৃতির দৌড় কতদূর, তাহ নির্দিষ্ট হয় নাই, সংসারও অনির্দিষ্ট রহস্তপূর্ণ ছিল। এখন নিজের সম্বন্ধে সকল সম্ভাবনার সীমায় আসিয়া পৌছিয়াছি, পৃথিবীও সেই সঙ্গে সংকুচিত হইয়া গেছে। এখন ইহা আমারই আপিস-ঘর বৈঠকখানা দর-দালানের শামিল হইয়া পড়িয়াছে। সেইভাবেই পৃথিবী এত বেশি অভ্যন্ত পরিচিত হইয়া গেছে যে, ভুলিয়া গেছি এমন কত আপিস-ঘর বৈঠকখানা দর-দালান ছায়ার মতো এই পৃথিবীর উপর দিয়া গেছে, ইহাতে চিহ্নও রাখিতে পারে নাই। কত প্রৌঢ় নিজের মামলামকদ্দমার মন্ত্ৰগৃহকেই পৃথিবীর ধ্রুব কেন্দ্রস্থল গণ্য করিয়া তাকিয়ার উপর ঠেসান দিয়া