পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ శ్రీఅపి পরনিন্দ পরনিন্দ পৃথিবীতে এত প্রাচীন এবং এত ব্যাপক যে, সহসা ইহার বিরুদ্ধে একটা যে-সে মত প্রকাশ করা ধৃষ্টতা হুইয়া পড়ে। নোনা জল পানের পক্ষে উপযোগী নহে এ কথা শিশুও জানে— কিন্তু যখন দেখি সাতস মুত্রের জল ছুনে পরিপূর্ণ, যখন দেখি এই নোনা জল সমস্ত পৃথিবীকে বেড়িয়া আছে, তখন এ কথা বলিতে কোনোমতেই সাহস হয় না যে, সমুদ্রের জলে হুন না থাকিলেই ভালো হইত। নিশ্চয়ই ভালো হইত না, হয়তে লবণজলের অভাবে পৃথিবী পচিয়া উঠিত। امه তেমনি, পরনিন্দ সমাজের কণায় কণায় যদি মিশিয়া না থাকিত তবে নিশ্চয়ই একটা বড়ো রকমের অনর্থ ঘটিত । উহা লবণের মতো সমস্ত সংসারকে বিকার হইতে রক্ষা করিতেছে । পাঠক বলিবেন, “বুঝিয়াছি। তুমি যাহা বলিতে চাও, তাহা অত্যন্ত পুরাতন । অর্থাৎ নিন্দার ভয়ে সমাজ প্রকৃতিস্থ হইয়া আছে ।” এ কথা যদি পুরাতন হয় তবে আনন্দের বিষয়। আমি তো বলিয়াছি, যাহা পুরাতন তাহা বিশ্বাসের যোগ্য। বস্তুত নিন্দ না থাকিলে পৃথিবীতে জীবনের গৌরব কী থাকিত ? একটা ভালো কাজে হাত দিলাম, তাহার নিন্দ কেহ করে না, সে ভালো কাজের দাম কী ! একটা - ভালো কিছু লিখিলাম, তাহার নিন্দুক কেহ নাই, ভালো গ্রন্থের পক্ষে এমন মর্মাস্তিক অনাদর কী হইতে পারে। জীবনকে ধর্মচর্চায় উৎসর্গ করিলাম, যদি কোনো লোক তাহার মধ্যে গৃঢ় মন্দ অভিপ্রায় না দেখিল তবে সাধুত ষে নিতান্তই সহজ হইয়া পড়িল । মহত্ত্বকে পদে পদে নিন্দার কাটা মাড়াইয়া চলিতে হয় । ইহাতে ষে হার মানে বীরের সদগতি সে লাভ করে না। পৃথিবীতে নিন্দ দোষীকে সংশোধন করিবার জন্য আছে তাহা নহে, মহত্ত্বকে গৌরব দেওয়া তাহার একটা মস্ত কাজ । নিন্দা-বিরোধ গায়ে বাজে না, এমন কথা অল্প লোকই বলিতে পারে। কোনো সহৃদয় লোক তো বলিতে পারে না। যাহার হৃদয় বেশি তাহার ব্যথা পাইবার শক্তিও বেশি। যাহার হৃদয় আছে সংসারে সেই লোকই কাজের মতো কাজে হাত দেয়। আবার লোকের মতো লোক এবং কাজের মতো কাজ দেখিলেই নিন্দার ধার চারগুণ শাণিত হইয়া উঠে। ইহাতেই দেখা যায়, বিধাতা যেখানে অধিকার বেশি দিয়াছেন to SS