পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ჭa• রবীন্দ্র-রচনাবলী সেইখানেই দুঃখ এবং পরীক্ষা অত্যন্ত কঠিন করিয়াছেন। বিধাতার সেই বিধানই জয়ী হউক। নিন্দ দুঃখ বিরোধ যেন ভালো লোকের, গুণী লোকের ভাগ্যেই বেশি করিয়া জোটে। যে যথার্থরূপে ব্যথা ভোগ করিতে জানে সেই যেন ব্যথা পায়। অযোগ্য ক্ষুদ্র ব্যক্তির উপরে যেন নিন্দ-বেদনার অনাবশ্যক অপব্যয় না হয় । সরলহদয় পাঠক পুনশ্চ বলিবেন, “জানি, নিন্দায় উপকার আছে। যে লোক দোষ করে তাহার দোষকে ঘোষণা করা ভালো ; কিন্তু ষে করে না তাহার নিন্দায় সংসারে ভালো হইতেই পারে না। মিথ্যা জিনিসটা কোনো অবস্থাতেই ভালো নয় ।” এ হইলে তো নিন্দ টিকে না। প্রমাণ লইয়া দোষীকে দোষী সাব্যস্ত করা, সে তো হইল বিচার। সে গুরুভার কয়জন লইতে পারে, এবং এত সময়ই বা কাহার হাতে আছে ? তাহা ছাড়া পরের সম্বন্ধে এত অতিরিক্ত মাত্রায় কাহারও গরজ নাই। যদি থাকিত তবে পরের পক্ষে তাহা একেবারেই অসহ্য হইত। নিন্দুককে সহ করা যায়, কারণ, তাহার নিন্দুকতাকে নিন্দ করিবার স্থখ আমারও হাতে আছে ; কিন্তু বিচারককে সহ করিবে কে ? বস্তুত আমরা অতি সামান্য প্রমাণেই নিন্দা করিয়া থাকি, নিন্দার সেই লাঘবতাটুকু না থাকিলে সমাজের হাড় গুড়া হইয়। যাইত। নিন্দার রায় চূড়ান্ত রায় নহে ; নিন্দিত ব্যক্তি ইচ্ছা করিলে তাহার প্রতিবাদ না করিতেও পারে। এমন-কি, নিন্দাবাক্য হাসিয়া উড়াইয়া দেওয়াই স্ববুদ্ধি বলিয়া গণ্য। কিন্তু নিন্দ যদি বিচারকের রায় হইত তবে স্ববুদ্ধিকে উকিল-মোক্তারের শরণ লইতে হইত। র্যাহারা জানেন র্তাহারা স্বীকার করিবেন, উকিল-মোক্তারের সহিত কারবার হাসির কথা নহে। অতএব দেখা যাইতেছে, সংসারের প্রয়োজন হিসাবে নিন্দার যতটুকু গুরুত্ব আবশ্বক তাহাও আছে, যতটুকু লঘুত্ব থাকা উচিত তাহারও অভাব নাই । পূর্বে যে পাঠকটি আমার কথায় অসহিষ্ণু হইয়া উঠিয়াছিলেন তিনি নিশ্চয়ই বলিবেন, "তুচ্ছ অনুমানের উপরেই হউক বা নিশ্চিত প্রমাণের উপরেই হউক, নিন্দ যদি করিতেই হয় তবে ব্যথার সহিত করা উচিত— নিন্দায় সুখ পাওয়া উচিত নহে ।” এমন কথা যিনি বলিবেন তিনি নিশ্চয়ই সহৃদয় ব্যক্তি । সুতরাং তাহার বিবেচনা করিয়া দেখা উচিত— নিন্দায় নিন্দিত ব্যক্তি ব্যথা পায়, আবার নিন্দুকও যদি বেদন বোধ করে, তবে সংসারে দুঃখবেদনার পরিমাণ কিরূপ অপরিমিতরূপে বাড়িয়া উঠে । তাহা হইলে নিমন্ত্রণসভা নিস্তব্ধ, বন্ধুসভা বিষাদে ম্ৰিয়মাণ, সমালোচকের চক্ষু অশ্রুপুত