পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وا8N গাছপালারা যে ভাষা না বোঝে । এমনি করিয়া চৈত্রের শেষ পর্যন্ত মাটি বাতাস ও আকাশের মধ্যে জীবনটাকে কাচা করিয়া, সবুজ করিয়া, ছড়াইয়া দিব— আলোতে ছায়াতে চুপ করিয়া পড়িয়া থাকিব। 弹 কিন্তু, হায়, কোনো কাজই বন্ধ হয় নাই ; হিসাবের খাতা সমানই খোলা রহিয়াছে। নিয়মের কলের মধ্যে, কর্মের ফাঁদের মধ্যে পড়িয়া গেছি, এখন বসন্ত আসিলেই কী : আর গেলেই কী । মচুন্যসমাজের কাছে আমার সবিনয় নিবেদন এই যে, এ অবস্থাটা ঠিক নহে ইহার সংশোধন দরকার। বিশ্বের সহিত স্বতন্ত্র বলিয়াই যে মানুষের গৌরব তাহা নহে। মানুষের মধ্যে বিশ্বের সকল বৈচিত্র্যই আছে বলিয়া মানুষ বড়ো । মানুষ জড়ের সহিত জড়, তরুলতার সঙ্গে তরুলতা, মৃগপক্ষীর সঙ্গে মৃগপক্ষী। প্রকৃতিরাজবাড়ির নানা মহলের নানা দরজাই তাহার কাছে খোলা । কিন্তু খোলা থাকিলে কী হইবে ? এক-এক ঋতুতে এক-এক মহল হইতে যখন উৎসবের নিমন্ত্রণ আসে তখন মানুষ যদি গ্রাহ না করিয়া আপন আড়তের গদিতেই পড়িয়া থাকে, তবে এমন বৃহৎ অধিকার সে কেন পাইল ? পুরা মানুষ হইতে হইলে তাহাকে সবই হইতে হইবে, এ কথা না মনে করিয়া মানুষ মতুযুত্বকে বিশ্ববিদ্রোহের একটা সংকীর্ণ ধ্বজাস্বরূপ খাড়া করিয়া তুলিয়া রাখিয়াছে কেন ? কেন সে দম্ভ করিয়া বার বার এ কথা বলিতেছে, আমি জড় নহি, উদ্ভিদ নহি, পশু নহি, আমি মাতুয— আমি কেবল কাজ করি ও সমালোচনা করি, শাসন করি ও বিদ্রোহ করি। কেন সে এ কথা বলে না, আমি সমস্তই, সকলের সঙ্গেই আমার অবারিত যোগ আছে স্বাতন্ত্র্যের ধ্বজ আমার নহে । হায় রে সমাজ-দাড়ের পাখি, আকাশের নীল আজ বিরহিণীর চোখদুটির মতো স্বপ্নাবিষ্ট, পাতার সবুজ আজি তরুণীর কপোলের মতো নবীন, বসস্তের বাতাস আজ মিলনের আগ্রহের মতো চঞ্চল, তবু তোর পাখা দুটা আজ বন্ধ, তবু তোর পায়ে আজ কর্মের শিকল ঝনঝন করিয়া বাজিতেছে— এই কি মানবজন্ম । চৈত্র ১৩০৯