পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিচিত্র প্রবন্ধ • ,8ማዓ বৃহৎ বাড়ির মধ্যে কেবল একটি ঘর বন্ধ । তাহার তালাতে মরিচ ধরিয়াছে, তাহার চাবি কোথাও খুজিয়া পাওয়া যায় না। সন্ধ্যাবেল সে ঘরে আলো জলে না, দিনের বেলা সে ঘরে লোক থাকে না— এমন কতদিন হইতে কে জানে । সে ঘর খুলিতে ভয় হয়, অন্ধকারে তাহার সমুখ দিয়া চলিতে গা ছমছম করে। যেখানে মানুষ হাসিয়া মানুষের সঙ্গে কথা কয় না সেইখানেই আমাদের যত ভয় । যেখানে মানুষে মানুষে দেখাশুনা হয় সেই পবিত্র স্থানে ভয় আর আসিতে পারে না। छूट्रेथॉनि नब्रख ঝণপিয়া ঘর মাঝখানে দাড়াইয়া আছে। দরজার উপর কান দিয়া থাকিলে ঘরের ভিতর হইতে যেন হু হু শব্দ শুনা যায়। حياته এ ঘর বিধবা । এক জন কে ছিল সে গেছে, সেই হইতে এ গৃহের দ্বার রুদ্ধ। সেই অবধি এখানে আর কেহ আসেও না, এখান হইতে আর কেহ যায়ও না। সেই অবধি এখানে যেন মৃত্যুরও মৃত্যু হইয়াছে। এ জগতে অবিশ্রাম জীবনের প্রবাহ মৃত্যুকে হু হু করিয়া ভাসাইয়া লইয়া যায়, মৃত কোথাও টিকিয়া থাকিতে পারে না। এই ভয়ে সমাধিভবন কৃপণের মতো মৃতকে চোরের হাত হইতে রক্ষা করিবার জন্য পাষাণপ্রাচীরের মধ্যে লুকাইয়া রাখে, ভয় তাহার উপরে দিবারাত্রি পাহারা দিতে থাকে। মৃত্যুকেই লোকে চোর বলিয়া নিন্দ করে, কিন্তু জীবনও যে চকিতের মধ্যে মৃত্যুকে চুরি করিয়া আপনার বহুবিস্তৃত পরিবারের মধ্যে বঁাটিয়া দেয়, সে কথার কেহ উল্লেখ করে না । পৃথিবী মৃত্যুকেও কোলে করিয়া লয় জীবনকেও কোলে করিয়া রাখে পৃথিবীর কোলে উভয়েই ভাইবোনের মতো খেলা করে। এই জীবনমৃত্যুর প্রবাহ দেখিলে, তরঙ্গভঙ্গের উপর ছায়া-আলোর খেলা দেখিলে, আমাদের কোনো ভয় থাকে না ; কিন্তু বন্ধ-মৃত্যু রুদ্ধ-ছায়া দেখিলেই আমাদের ভয় হয়। মৃত্যুর গতি যেখানে আছে, জীবনের হাত ধরিয়া মৃত্যু যেখানে একতালে নৃত্য করে, সেখানে মৃত্যুরও জীবন আছে, সেখানে মৃত্যু ভয়ানক নহে; কিন্তু চিহ্নের মধ্যে আবদ্ধ গতিহীন মৃত্যুই প্রকৃত মৃত্যু, তাহাই ভয়ানক। এই জন্য সমাধিভূমি ভয়ের আবাসস্থল। পৃথিবীতে যাহা আসে তাহাই যায়। এই প্রবাহেই জগতের স্বাস্থ্যরক্ষা হয়। কণামাত্রের যাতায়াত বন্ধ হইলে জগতের সামঞ্জস্ত ভঙ্গ হয় । জীবন যেমন আসে, জীবন তেমনি যায়। মৃত্যুও যেমন আসে মৃত্যুও তেমনি ৰায়। তাহাকে ধরিয়া রাখিবার চেষ্টা কর ক্লেন ? দিয়টাকে পাষাণ করিয়া সেই পাষাণের মধ্যে তাহাকে