পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ఏ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বাদরের ভূক্তবিশিষ্ট ভাত এক চঞ্চু লইয়া ছাদের উপরে উড়িয়া বসিতেছে। ঘরের কোণে একটা প্রাচীন হারমোনিয়ম-বাস্কের মধ্যে গোটাকতক ইদুর খটু খট্‌ করিতেছে। কলিকাতা শহরের ইমারতের একটি শুষ্ক কঠিন কামরা, ইহারই মধ্যে আমি গঙ্গার আবাহন করিতেছি— তপক্ষীণ জহ্ন মুনির শুষ্ক পাকস্থলীর অপেক্ষ এখানে ঢের বেশি স্থান আছে। আর, স্থানসংকীর্ণতা বলিয়া কোনো পদার্থ প্রকৃতির মধ্যে নাই। সে আমাদের মনে । দেখো— বীজের মধ্যে অরণ্য, একটি জীবের মধ্যে তাহার অনন্ত বংশপরম্পরা। আমি যে ওই ষ্টফেন সাহেবের এক বোতল ব্লু ব্লাক কালী কিনিয়া অনিয়াছি, উহারই প্রত্যেক ফোটার মধ্যে কত পাঠকের স্বযুপ্তি মাদার-টিংচার -আকারে বিরাজ করিতেছে। এই কালীর বোতল দৈবক্রমে যদি স্বষোগ্য হাতে পড়িত তবে ওটাকে দেখিলে ভাবিতাম, স্বাক্টর পূর্ববর্তী অন্ধকারের মধ্যে এই বিচিত্র আলোকময় অমর জগং যেমন প্রচ্ছন্ন ছিল তেমনি ওই এক বোতল অন্ধকারের মধ্যে কত আলোকময় নূতন স্বষ্টি প্রচ্ছন্ন আছে। একটা বোতল দেখিয়াই এত কথা মনে উঠে, যেখানে স্টীফেন সাহেবের কালীর কারখানা সেখানে দাড়াইয়া একবার ভাবিলে বোধ করি মাথা ঠিক রাখিতে পারি না। কত পুথি, কত চটি, কত যশ, কত কলঙ্ক, কত জ্ঞান, কত পাগলামি, কত ফাসির হুকুম, যুদ্ধের ঘোষণা, প্রেমের লিপি কালো কালো হইয়া স্রোত বাহিয়া বাহির হইতেছে । ওই স্রোত যখন সমস্ত জগতের উপর দিয়া বহিয়া গিয়াছে—তখন—দুর হউক কালী যে ক্রমেই গড়াইতে চলিলষ্টফেন সাহেবের সমস্ত কারখানাটাই দৈবাং যেন উন্টাইয়া পড়িয়াছে ; এবারে ব্লটিং কাগজের কথা মনে পড়িতেছে । স্রোত ফিরানো যাক | এসো এবার গঙ্গার শ্ৰেণতে এসো । সত্য ঘটনায় ও উপন্যাসে প্রভেদ আছে, তাহার সাক্ষ্য দেখো, আমাদের জাহাজ বয়ায় ঠেকিল তবু ডুবিল না— পরম-বীরত্ব-সহকারে কাহাকেও উদ্ধার করিতে হইল না— প্রথম পরিচ্ছেদে জলে ডুবিয়া মরিয়া যড় বিংশ পরিচ্ছেদে কেহ ডাঙায় বাচিয় উঠিল না। না ডুবিয়া সুখী হইয়াছি সন্দেহ নাই, কিন্তু লিথিয়া মুখ-হুইতেছে না ; পাঠকেরা নিশ্চয়ই অত্যস্ত নিরাশ হইবেন, কিন্তু আমি যে ডুবি নাই সে আমার দোষ নয়, নিতান্তই অদৃষ্টের কারখানা। অতএব আমার প্রতি কেহ না রুষ্ট হন এই আমার প্রার্থনা । মরিলাম না বটে, কিন্তু যমরাজের মহিষের কাছ হইতে একটা রীতিমত দু খাইয়া . ফিরিলাম। সুতরাং সেই ঝণকানির কথাটা স্মরণফলকে খোদিত হইয়া রহিল। খানিকক্ষণ অবাক ভাবে পরস্পরের মুখ-চাওয়া-চাওয়ি করা গেল— সকলেরই মুখে এক ভাব, সকলেই বাক্যব্যয় করা নিতান্ত বাহুল্য জ্ঞান করিলেন। বউঠাকরুন বৃহৎ