পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী

এই চিরবিরহের কথা উল্লেখ করিয়া বৈষ্ণব কৰি গাহিয়াছেন । দুহু কোলে দুহ কঁাদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া। আমরা প্রত্যেকে নির্জন গিরিশৃঙ্গে একাকী দণ্ডায়মান হইয়া উত্তরমুখে চাহিয়া আছি; মাঝখানে আকাশ এবং মেঘ এবং সুন্দরী পৃথিবীর রেবা সিপ্রা অবন্তী উজ্জয়িনী, সুখ-সৌন্দর্য-ভােগ-ঐশ্বর্যের চিত্রলেখা; যাহাতে মনে করাইয়া দেয়, কাছে আসিতে দেয় না; আকাঙ্ক্ষার উদ্রেক করে, নিবৃত্তি করে না। দুটি মানুষের মধ্যে এতটা দূর! কিন্তু এ কথা মনে হয়, আমরা যেন কোনাে-এক কালে একত্র এক মানসলােকে ছিলাম, সেখান হইতে নির্বাসিত হইয়াছি। তাই বৈষ্ণব কবি বলেন : তােমায় হিয়ার ভিতর হইতে কে কৈল বাহির! এ কী হইল। যে আমার মনােরাজ্যের লােক, সে আজ বাহিরে আসিল কেন। ওখানে তত তােমার স্থান নয়। বলরাম দাস বলিতেছেন : তেঁই বলরামের, পহু, চিত নহে স্থির! যাহারা একটি সর্বব্যাপী মনের মধ্যে এক হইয়া ছিল তাহারা আজ সব বাহির হইয়া পড়িয়াছে। তাই পরস্পরকে দেখিয়া চিত্ত স্থির হইতে পারিতেছে না; বিরহে বিধুর, বাসনায় ব্যাকুল হইয়া পড়িতেছে। আবার হৃদয়ের মধ্যে এক হইবার চেষ্টা করিতেছি, কিন্তু মাঝখানে বৃহৎ পৃথিবী। | হে নির্জন গিরিশিখরের বিরহী, স্বপ্নে যাহাকে আলিঙ্গন করিতেছ, মেঘের মুখে যাহাকে সংবাদ পাঠাইতেছ, কে তােমাকে আশ্বাস দিল যে, এক অপূর্ব সৌন্দর্যলােকে শরংপূর্ণিমারাত্তে তাহার সহিত চিরমিলন হইবে। তােমার তাে চেতন-অচেতনে পার্থক্যজ্ঞান নাই, কী জানি, যদি সত্য ও কল্পনার মধ্যেও প্রভেদ হারাইয়া থাক।

১২৯৮

কুমারসম্ভব ও শকুন্তলা

কালিদাস একান্তই সৌন্দর্যসম্ভোগের কবি, এ মত লােকের মধ্যে প্রচলিত। সেইজন্য লৌকিক গল্পে-গুজবে কালিদাসের চরিত্র কলকে মাখান। এই গল্পগুলি জন সাধারণকর্তৃক কালিদাসের কাব্য-সমালােচনা। ইহা হইতে বুঝা যাইবে, জনসাধারণের প্রতি আর যে-কোনাে বিষয়ে আস্থা স্থাপন করা যাক,সাহিত্যবিচার সম্বন্ধে সেই গন্ধের উপরে অ নির্ভর করা চলে না। মহাভারতে যে একটা বিপুল করে আন্দোলন দেখা যায়, তাহার মধ্যে একটি