পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

¢२२ রবীন্দ্র-রচনাবলী চঞ্চলসৌন্দর্যময় বিচিত্র-পূর্বমিলন হইতে স্বৰ্গতপোষনে শাখত-আনন্দময় উত্তরমিলনে যাত্রাই অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটক। ইহা কেবল বিশেষ কোনো ভাবের অবতারণা নহে, বিশেষ কোনো চরিত্রের বিকাশ নহে, ইহা সমস্ত কাব্যকে এক লোক হইতে অন্ত লোকে লইয়া ষাওয়া— প্রেমকে স্বভাবসৌন্দর্ষের দেশ হইতে মঙ্গলসৌন্দর্যের অক্ষয় স্বৰ্গধামে উত্তীর্ণ করিয়া দেওয়া। এই প্রসঙ্গটি আমরা অন্ত একটি প্রবন্ধে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করিয়াছি, সুতরাং এখানে তাহার পুনরুক্তি করিতে ইচ্ছা করি না । । স্বৰ্গ ও মর্তের এই-ষে মিলন, কালিদাস ইহা অত্যন্ত সহজেই করিয়াছেন। ফুলকে তিনি এমনি স্বভাবত ফলে ফলাইয়াছেন, মর্তের সীমাকে তিনি এমনি করিয়া স্বর্গের সহিত মিশাইয়া দিয়াছেন যে, মাঝে কোনো ব্যবধান কাহারও চোখে পড়ে না । প্রথম অঙ্কে শকুন্তলার পতনের মধ্যে কবি মর্তের মাটি কিছুই গোপন রাখেন নাই ; তাহার মধ্যে বাসনার প্রভাব ষে কতদূর বিদ্যমান, তাহা দুষ্মন্ত শকুন্তলা উভয়ের ব্যবহারেই কবি সুস্পষ্ট দেখাইয়াছেন। যৌবনমত্ততার হাবভাব-লীলাচাঞ্চল্য, পরম লজ্জার সহিত প্রবল আত্মপ্রকাশের সংগ্রাম, সমস্তই কবি ব্যক্ত করিয়াছেন। ইহা শকুন্তলার সরলতার নিদর্শন। অমুকুল অবসরে এই ভাবাবেশের আকস্মিক আবিৰ্গবের জন্ত সে পূর্ব হইতে প্রস্তুত ছিল না। সে আপনাকে দমন করিবার, গোপন করিবার উপায় করিয়া রাখে নাই । ষে হরিণী ব্যাধকে চেনে না তাহার কি বিদ্ধ হইতে বিলম্ব লাগে ? শকুন্তলা পঞ্চশরকে ঠিকমত চিনিত না, এইজন্তই তাহার মৰ্মস্থান অরক্ষিত ছিল। সে না কন্দপকে, না দুষ্মস্তকে, কাহাকেও অবিশ্বাস করে নাই । যেমন, যে অরণ্যে সর্বদাই শিকার হইয়া থাকে সেখানে ব্যাধকে অধিক করিয়া আঙ্কগোপন করিতে হয়, তেমনি যে সমাজে স্ত্রীপুরুষের সর্বদাই সহজেই মিলন হইয়া থাকে সেখানে মীনকেতুকে অত্যন্ত সাবধানে নিজেকে প্রচ্ছন্ন রাখিয়া কাজ করিতে হয়। তপোবনের হরিণী যেমন,অশঙ্কিত তপোবনের বালিকাও তেমনি অসতর্ক । تي يف শকুন্তলার পরাভব যেমন অতি সহজে চিত্রিত হইয়াছে তেমনি সেই পরাঙ্কৰসত্বেও তাহার চরিত্রের গভীরতর পবিত্রত, তাহার স্বাভাবিক অক্ষুঃ সতীত্ব, অতি জনায়াসেই পরিস্ফুট হইয়াছে। ইহাও তাহার সরলতার নিদর্শন। ঘরের ভিতরে ষে কৃত্রিম ফুল সাজাইয়া রাখা যায় তাহার খুলা প্রত্যহ না বাড়িলে চলে না, কিন্তু অরণ্যফুলের ধুলা বাড়িবার জন্য লোক রাখিতে হয় না ; সে অনাবৃত থাকে, তাহার গারে ধুলাও লাগে, তবু সে কেমন করিয়া সহজে আপনার স্বন্দর নির্মলতাটুকু রক্ষা করিয়া চলে। শকুন্তলাকেও ধুলা লাগিয়াছিল, কিন্তু তাহলে নিজে জানিতেও গারে