পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন সাহিত্য &&& চতুর্দিকের সহিত একাত্মভাবে ৰিজড়িত। তাহার মধুর চরিত্রখানি অরণ্যের ছায়া ও মাধবীলতার পুষ্পমঞ্জরীর সহিত ব্যাপ্ত ও বিকশিত, পশুপক্ষীদের আকৃত্রিম সৌহার্দের সহিত নিবিড়ভাবে আকৃষ্ট । কালিদাস র্তাহার নাটকে যে বহিঃপ্রকৃতির বর্ণনা করিয়াছেন তাহাকে বাহিরে ফেলিয়া রাখেন নাই, তাহাকে শকুন্তলার চরিত্রের মধ্যে উন্মেষিত করিয়া তুলিয়াছেন। সেইজন্য বলিতেছিলাম, শকুন্তলাকে তাহার কাব্যগত পরিবেষ্টন হইতে বাহির করিয়া আনা কঠিন। ফাদিনান্দের সহিত প্রণয়ব্যাপারেই মিরান্দার প্রধান পরিচয় ; আর ঝড়ের সময় ভগ্নতরী হতভাগ্যদের জন্য ব্যাকুলতায় তাহার ব্যথিত হৃদয়ের করুণা প্রকাশ পাইয়াছে। শকুন্তলার পরিচয় আরও অনেক ব্যাপক। দুষ্মন্ত না দেখা দিলেও তাহার মাধুর্ব বিচিত্রভাবে প্রকাশিত হইয়া উঠিত। তাহার হৃদয়লতিকা চেতন-অচেতন সকলকেই স্নেহের ললিতবেষ্টনে স্বন্দর করিয়া বাধিয়াছে। সে তপোবনের তরুগুলিকে জলসেচনের সঙ্গে সঙ্গে সোরস্নেহে অভিষিক্ত করিয়াছে। সে নবকুস্বমযৌবন বনজ্যোংস্কাকে স্নিগ্ধদৃষ্টির দ্বারা আপনার কোমল হৃদয়ের মধ্যে গ্রহণ করিয়াছে। শকুন্তলা যখন তপোবন ত্যাগ করিয়া পতিগৃহে যাইতেছে তখুন পদে পদে তাহার আকর্ষণ, পদে পদে তাহার বেদন । বনের সহিত মানুষের বিচ্ছেদ যে এমন মর্মাস্তিক সকরুণ হইতে পারে তাহা জগতের সমস্ত সাহিত্যের মধ্যে কেবল অভিজ্ঞান-শকুন্তলের চতুর্থ অঙ্কে দেখা যায়। এই কাব্যে স্বভাব ও ধর্মনিয়মের যেমন মিলন, মানুষ ও প্রকৃতির তেমনি মিলন। বিসদৃশের মধ্যে এমন একান্ত মিলনের ভার বোধ করি ভারতবর্ষ ছাড়া অন্য কোনো দেশে সম্ভবপর হইতে পারে না। টেম্পেস্টে বহিঃপ্রকৃতি এরিয়েলের মধ্যে মানুষ-আকার ধারণ করিয়াছে, কিন্তু তৰু সে মানুষের আত্মীয়তা হইতে দূরে রহিয়াছে। মানুষের সঙ্গে তাহার অনিচ্ছুক ভূত্যের সম্বন্ধ । সে স্বাধীন হইতে চায়, কিন্তু মানবশক্তিত্বারা পীড়িত আবদ্ধ হইয়া দাসের মতো কাজ করিতেছে। তাহার হৃদয়ে স্নেহ নাই, চক্ষে জল নাই। মিরান্দার নারীহৃদয়ও তাহার প্রতি স্নেহবিস্তার করে নাই। দ্বীপ হইতে যাত্রাকালে প্রম্পেরো ও মিরান্দার সহিত এরিয়েলের স্নিগ্ধ বিদায়সম্ভাষণ হইল না। টেম্পেস্টে পীড়ন, শাসন, দমন ;• শকুন্তলায় প্রীতি, শাস্তি, সাভাব। টেম্পেস্টে প্রকৃতি মানুষ-আকার ধারণ করিয়াও তাহার সহিত হৃদয়ের সম্বন্ধে বন্ধ হয় নাই ; শকুন্তলায় গাছপালা-পশুপক্ষী আজ্বভাব রক্ষা করিয়াও মাহুষের সহিত মধুর আত্মীয়ভাবে মিলিত হইয়া গেছে। শকুন্তলার আরম্ভেই যখন ধন্থর্বাণধারী রাজার প্রতি এই করুণ নিষেধ উখিত হইল ’ভে তে রাজন আশ্রমমূগোহয়ং ন হজবো ন হন্তব্য’, তখন কাব্যের একটি