পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●ミbr রবীন্দ্র-রচনাবলী শকুন্তলা পশ্চাৎ হইতে বাধা পাইয়া কহিল, ‘আরে, কে আমার কাপড় ধরিয়া টানে ? কশ্ব কহিলেন, ‘বংসে,— ইক্ষুদির তৈল দিতে স্নেহসহকারে কুশক্ষত হলে মুখ যার, খামাধান্তমুষ্টি দিয়ে পালিয়াছ ষারে এই মৃগ পুত্র সে তোমার ” শকুন্তলা তাঁহাকে কহিল, ‘ওরে বাছ, সহবাসপরিত্যাগিনী আমাকে আর কেন অনুসরণ করিস। প্রসব করিয়াই তোর জননী যখন মরিয়াছিল তখন হইতে আমিই তোকে বড়ো করিয়া তুলিয়াছি। এখন আমি চলিলাম, তাত তোকে দেখিবেন, তুই ফিরিয়া যা ।” এইরূপে সমুদয় তরুলতা-মৃগপক্ষীর নিকট হইতে বিদায় লইয়া কাদিতে কঁাদিতে শকুন্তলা তপোবন ত্যাগ করিয়াছে। লতার সহিত ফুলের যেরূপ সম্বন্ধ, তপোবনের সহিত শকুন্তলার সেইরূপ স্বাভাবিক সম্বন্ধ । অভিজ্ঞানশকুন্তল নাটকে অনস্বয়া-প্রিয়ংবদা যেমন, কখ যেমন, দুষ্মন্ত যেমন, তপোবনপ্রকৃতিও তেমনি একজন বিশেষ পাত্র। এই মূক প্রকৃতিকে কোনো নাটকের ভিতরে যে এমন প্রধান, এমন অত্যাবশ্যক স্থান দেওয়া যাইতে পারে, তাহ বোধ করি সংস্কৃতসাহিত্য ছাড়া আর কোথাও দেখা যায় নাই। প্রকৃতিকে মানুষ করিয়া তুলিয়া তাহার মুখে কথাবার্তা বসাইয়া রূপকনাট্য রচিত হইতে পারে ; কিন্তু প্রকৃতিকে প্রকৃত রাখিয়া তাহাকে এমন সজীব, এমন প্রত্যক্ষ, এমন ব্যাপক, এমন অস্তরঙ্গ করিয়া তোলা, তাহার দ্বারা নাটকের এত কার্য সাধন করাইয়া লওয়া, এ তো অন্তত্র দেখি নাই। বহিঃপ্রকৃতিকে যেখানে দূর করিয়া, পর করিয়া ভাবে, যেখানে মানুষ আপনার চারি দিকে প্রাচীর তুলিয়া জগতের সর্বত্র কেবল ব্যবধান রচনা করিতে থাকে, সেখানকার সাহিত্যে এরূপ স্বাক্ট সম্ভবপর হইতে পারে না । উত্তরচরিতেও প্রকৃতির সহিত মানুষের আত্মীয়বং সৌহার্দ এইরূপ ব্যক্ত হইয়াছে। রাজপ্রাসাদে থাকিয়াও সীতার প্রাণ সেই অরণ্যের জন্ত কঁাদিতেছে। সেখানে নদী তমসা ও বসন্তবনলক্ষ্মী তাহার প্রিয়সৰী, সেখানে ময়ূর ও কর্যশিশু তাহার কৃতকপুত্র, তরুলতা তাহার পরিজনবৰ্গ । টেম্পেস্ট, নাটকে মাস্থ্য আপনাকে বিশ্বের মধ্যে মঙ্গলভাবে প্রতিযোগে প্রসারিত