পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৩২ ब्रबौठ-ब्रळ्नावलौ তাহার পরে শকুন্তলার চতুদিকে কী গভীর স্তৰতা, কী বিয়লত। যে শকুন্তল৷ কোমল হৃদয়ের প্রভাবে তাহার চারি দিকের বিশ্ব জুড়িয়া সকলকে আপনার করিয়া থাকিত সে আজ কী একাকিনী। তাহার সেই বৃহৎ শূন্যতাকে শকুন্তলা আপনার একমাত্র মহৎ দুঃখের দ্বারা পূর্ণ করিয়া বিরাজ করিতেছে। কালিদাস ষে তাহাকে কম্বের তপোবনে ফিরাইয়া লইয়া ষান নাই, ইহা তাহার অসামান্ত কবিত্বের পরিচয়। পূর্বপরিচিত বনভূমির সহিত তাহার পূর্বের মিলন আর সম্ভবপর নহে। কথাশ্রম হইতে যাত্রাকালে তপোবনের সহিত শকুন্তলার কেবল বাহবিচ্ছেদমাত্র ঘটিয়াছিল, কুষ্মন্তভবন হইতে প্রত্যাখ্যাত হইয়া সে বিচ্ছেদ সম্পূর্ণ হইল ; সে শকুন্তলা আর রহিল না, এখন বিশ্বের সহিত তাহার সম্বন্ধ-পরিবর্তন হইয়া গেছে, এখন তাহাকে তাহার পুরাতন সম্বন্ধের মধ্যে স্থাপন করিলে অসামঞ্চস্ত উংকট নিষ্ঠুরভাবে প্রকাশিত হইত। এখন এই দুঃখিনীর জন্ত তাহার মহং দুঃখের উপযোগী বিরলতা আবশ্যক। সপীবিহীন নূতন তপোবনে কালিদাস শকুন্তলার বিরহদুঃখের প্রত্যক্ষ অবতারণা করেন নাই। কবি নীরব থাকিয়া শকুন্তলার চারি দিকের নীরবতা ও শূন্তত আমাদের চিত্তের মধ্যে ঘনীভূত করিয়া দিয়াছেন। কবি যদি শকুন্তলাকে কথাপ্রমের মধ্যে ফিরাইয়া লইয়া এইরূপ চুপ করিয়াও থাকিতেন, তবু সেই আশ্রম কথা কহিত। সেখানকার তরুলতার ক্ৰন্দন, সখীজনের বিলাপ, আপনি আমাদের অস্তরের মধ্যে ধ্বনিত হইতে থাকিত । কিন্তু অপরিচিত মারীচের তপোবনে সমস্তই আমাদের নিকট স্তন্ধ, নীরব ; কেবল বিশ্ববিরহিত শকুন্তলার নিয়মসংযত ধৈর্যগম্ভীর অপরিমেয় দুঃখ আমাদের মানসনেত্রের সম্মুখে ধ্যানাসনে বিরাজমান। এই ধ্যানমগ্ন দুঃখের সম্মুখে কবি একাকী দাড়াইয়া আপন ওষ্ঠাধরের উপরে তর্জনী স্থাপন করিয়াছেন, এবং সেই নিষেধের সংকেতে সমস্ত প্রশ্নকে নীরব ও সমস্ত বিশ্বকে দূরে অপসারিত করিয়া রাখিয়াছেন। দুষ্মন্ত এখন অসুতাপে দগ্ধ হইতেছেন। এই অনুতাপ তপস্তা। এই অকুতাপের ভিতর দিয়া শকুন্তলাকে লাভ না করিলে শকুন্তলা-লাভের কোনো গৌরব ছিল না। হাতে পাইলেই যে পাওয়া তাহ পাওয়া নহে ; লাভ করা অত সহর্জ ব্যাপার নয় । ‘যৌবনমত্ততার আকস্মিক বড়ে শকুন্তলাকে এক মুহূর্তে উড়াইয়া লইলে তাহাকে সম্পূর্ণতাবে পাওয়া যাইত না । লাভ করিবার প্রকৃষ্ট প্রণালী সাধনা, তপস্তা। যাহা অনায়াসেই হস্তগত হইয়াছিল তাহ অনায়াসেই হারাইয়া গেল। বাহা জাবেশের মুষ্টিতে জাহৃত হয় তাহা শিথিলভাবেই খলিত হইয়া পড়ে। সেইজন্ত কবি পরম্পরকে যথার্থতাবে চিরন্তনভাবে লাভের জন্ত দুষ্মন্ত-শকুন্তলাকে দীর্ঘ দুঃসহ তপস্তায় প্রবৃত্ত করিলেন। রাজসভায় প্রবেশ করিবামাত্র দুষ্মন্ত যদি তৎক্ষণাং শকুন্তলাকে গ্রহণ