পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Q8 e রবীন্দ্র-রচনাবলী রাজশ্রোতার ঘদি গল্পলোলুপ হইতেন তৰে কালিদাসের লেখনী হইতে তখনকার কালের কতকগুলি চিত্র পাওয়া যাইত। হায়, অবতীরাজ্যে নববর্ষার দিনে উদয়নকথাকোবিদ গ্রামবৃদ্ধের ৰে গল্প করিতেন সে-সমস্ত গেল কোথায় ? আসল কথা, গ্রামবুদ্ধের তখন গল্প করিতেন, কিন্তু সে গ্রামের ভাষায় । সে ভাষায় ৰে কবিরা রচনা করিয়াছেন তাহারা যথেষ্ট আনন্দদান করিয়াছেন, কিন্তু তাহার পরিবর্তে অমরতা লাভ করেন নাই। তাহদের কবিত্ব অল্প ছিল বলিয়া যে তাহার বিনাশ পাইয়াছেন এমন কথা বলি না। নিঃসন্দেহ তীহাদের মধ্যে অনেক মহাকবি জন্মিয়াছিলেন। কিন্তু গ্রাম্যভাষা প্রদেশবিশেষে বদ্ধ, শিক্ষিতমগুলীকর্তৃক উপেক্ষিত এবং কালে কালে তাহা পরিবর্তিত হইয়া আসিয়াছে— সে ভাষায় যাহারা রচনা করিয়াছেন তাহার কোনো স্থায়ী ভিত্তি পান নাই। নিঃসন্দেহ অনেক বড়ো বড়ো সাহিত্যপুরী চলনশীল পলিমৃত্তিকার মধ্যে নিহিত হইয়া একেবারে অদৃগু হইয়া গেছে। সংস্কৃত ভাষা কথ্য ভাষা ছিল না বলিয়াই সে ভাষায় ভারতবর্ষের সমস্ত হৃদয়ের কথা সম্পূর্ণ করিয়া বলা হয় নাই । ইংরাজি অলংকারে যে শ্রেণীর কবিতাকে লিরিক্স বলে তাহা মৃত ভাষায় সম্ভবে না। কালিদাসের বিক্রমোর্বশীতে যে সংস্কৃত গান আছে তাহাতেও গানের লঘুতা সরলতা ও অনির্বচনীয় মাধুর্যটুকু পাওয়া যায় না। বাঙালি জয়দেব সংস্কৃত ভাষাতে গান রচনা করিতে পারিয়াছেন, কিন্তু বাঙালি বৈষ্ণব কবিদের বাংলা পদাবলীর সহিত তাহার তুলনা হয় না। মৃত ভাষায়, পরের ভাষায় গল্পও চলে না। কারণ, গল্পে লঘুতা এবং গতিবেগ আবশ্বক— ভাষা যখন ভাসাইয়া লইয়া যায় না, ভাষাকে যখন ভারের মতো বহন করিয়া চলিতে হয়, তখন তাহাতে গান এবং গল্প সম্ভব হয় না। কালিদাসের কাব্য ঠিক স্রোতের মতো সর্বাঙ্গ দিয়া চলে না ; তাহার প্রত্যেক শ্লোক আপনাতে আপনি সমাপ্ত, একবার থামিয়া দাড়াইয়া সেই শ্লোকটিকে আয়ত্ত করিয়া লইয়া তবে পরের শ্লোকে হস্তক্ষেপ করিতে হয়। প্রত্যেক শ্লোকটি স্বতন্ত্র হীরকখণ্ডের স্তায় উজ্জল এবং সমস্ত কাব্যটি হীরকহারের স্তায় মুন্দর, কিন্তু নদীর তাহার অর্থও কলধ্বনি এবং অবিচ্ছিন্ন ধারা নাই। তা ছাড়া, সংস্কৃত ভাষার এমন স্বরবৈচিত্র্য, ধ্বনিগাষ্ঠীর্ষ, এমন স্বাভাষিক আকর্ষণ আছে, তাহাকে নিপুণরূপে চালনা করিতে পারিলে তাহাতে নানাষত্রের এমন কন্সট, বাজিয়া উঠে, তাহার অন্তর্নিহিত রাগিণীর এমন একটি অনির্বচনীয়তা আছে যে, কৰি- . পণ্ডিতেরা বাঙনৈপুণ্যে পণ্ডিত শ্রোতাদিগকে মুদ্ধ করিবার প্রলোভন সম্বরণ করিতে পারিতেন না। সেইজন্ত বেখানে বাক্যকে পংক্ষিপ্ত করিয়া বিষয়কে ক্ষত্ত্ব