পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(38 喙 রবীন্দ্র-রচনাবলী তাহাকে বাধা দিবার কেহ নাই। যদিও সত্যের অনুরোধে বলিতে হইয়াছে পুত্ৰক বিদিশা নগরীর রাজা, তথাপি অপ্রতিহতগামিনী ভাষা ও ভাবের অনুরোধে বলিতে হইয়াছে, তিনি চতুরুদধিমালামেখলায়া ভূবে ভর্তা'। শূদ্রকের মহিমা কতটুকু ছিল সেই ব্যক্তিগত তুচ্ছতথ্যালোচনায় প্রয়োজন নাই, কিন্তু রাজকীয় মহিমা কতদূর পর্যন্ত যাইতে পারে সেই কথা যথোচিত সমারোহসহকারে ঘোষিত হউক । সকলেই জানেন, ভাব সত্যের মতে কৃপণ নহে। সত্যের নিকট যে ছেলে কানা, ভাবের নিকট তাহার পদ্মলোচন হওয়া কিছুই বিচিত্র নহে। ভাবের সেই রাজকীয় অজস্রতার উপযোগী ভাষা সংস্কৃত ভাষা। সেই স্বভাববিপুলভাষা কাদম্বরীতে পূর্ণবর্ষার নদীর মতো আবর্তে তরঙ্গে গর্জনে আলোকচ্ছটায় বিচিত্র হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু কাদম্বরীর বিশেষ মাহাত্ম্য এই যে, ভাষা ও ভাবের বিশাল বিস্তার রক্ষা করিয়াও তাহার চিত্রগুলি জাগিয়া উঠিয়াছে। সমস্ত প্লাবিত হইয়া একাকার হইয়া যায় নাই। কাদম্বরীর প্রথম আরম্ভ-চিত্রটিই তাহার প্রমাণ । তখনও ভগবান মরীচিমালী অধিক দূরে উঠেন নাই ; নূতন পদ্মগুলির পত্রপুট একটু খুলিয়া গিয়াছে, আর তার পাটল আভাটি কিঞ্চিং উন্মুক্ত হইয়াছে। এই বলিয়া বর্ণনা আরম্ভ হইল। এই বর্ণনার আর-কোনো উদ্দেশ্য নাই, কেবল শ্রোতার চক্ষে একটি কোমল রঙ মাখাইয়া দেওয়া এবং তাহার সর্বাঙ্গে একটি স্নিগ্ধ স্বগন্ধ ব্যজন দুলাইয়া দেওয়া। একদা তু নাতিদূরোদিতে নবনলিনদলসম্পুটভিদি কিঞ্চিদুয়ুক্তপাটলিমি ভগবতি মরীচিমালিনি– কথার কী মোহ ! অনুবাদ করিতে গেলে শুধু এইটুকু ব্যক্ত হয় যে, তরুণ স্বর্ষের বর্ণ ঈষৎ রক্তিম, কিন্তু ভাষার ইন্দ্রজালে, কেবলমাত্র ওই বিশেষ্যবিশেষণের বিন্যাসে একটি স্বরম্য স্বগন্ধ সুবর্ণ সুশীতল প্রভাতকাল অনতিবিলম্বে হৃদয়কে আচ্ছন্ন করিয়া ধরে । এ যেমন প্রভাতের তেমনি একটি কথায় তপোবনে সন্ধ্যাসমাগমের বর্ণনা উদ্যুত করি — দিবাবসানে লোহিততারক তপোবনধেনুরিব কপিলা পরিবর্তমান সন্ধ্যা । নিশেষে তপোবনের রক্তচক্ষু ধেন্থটি যেমন গোষ্ঠে ফিরিয়া আসে, কপিলবর্ণ সন্ধ্যা তেমনি তপোবনে অবতীর্ণ। কপিলা ধেন্থর সহিত সন্ধ্যার রঙের তুলনা করিতে গিয়া সন্ধ্যার সমস্ত শাস্তি ও শ্রাস্তি এবং ধূসরচ্ছায় কৰি মুহূর্তেই মনের মধ্যে ঘনাইয়া তুলিতেছেন। ா wo J সকালের বর্ণনায় যেমন কেবলমাত্র তুলনাচ্ছলে উন্মুক্তপ্রায় নবপত্নপুটের স্বকোমল আতাসটুকুর .বিকাশ করিয়া মায়াবী চিত্রকর সমস্ত প্রভৃতিকে লৌকুমার্ষে এবং