পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রাচীন সাহিত্য (*6 & সেখানে যখন মহামহোৎসবের জন্য স্থান করিতে হইল, তখন ওইটুকু প্রান্ত হইতে বঞ্চিত করা আবস্তকই হইল না। পত্ৰলেখার প্রতি কাদম্বরীর ঈর্ষার আভাসমাত্রও ছিল না। এমন-কি, চন্দ্রাপীড়ের সহিত পত্ৰলেখার প্রতিসম্বন্ধ বলিয়াই কাদম্বর তাহাকে প্রিয়সখীজনে সাদরে গ্রহণ করিল। কাদম্বরীকাব্যের মধ্যে পত্ৰলেখা যে অপরূপ ভূখণ্ডের মধ্যে আছে সেখানে ঈর্ষা সংশয় সংকট বেদন কিছুই নাই, তাহা স্বর্গের স্তায় নিষ্কণ্টক, অথচ সেখানে স্বর্গের অমৃতবিন্দু কই ? প্রেমের উচ্ছসিত অমৃতপান তাহার সম্মুখেই চলিতেছে। ভ্রাণেও কি কোনো দিনের জন্য তাহার কোনো একটা শিরার রক্ত চঞ্চল হইয়া উঠে নাই ? সে কি চম্রাপীড়ের ছায়া ? রাজপুত্রের তপ্তযৌবনের তাপটুকুমাত্র কি তাহাকে স্পর্শ করে নাই ? কবি সে প্রশ্নের উত্তরমাত্র দিতে উপেক্ষা করিয়াছেন। কাব্যস্থষ্টির মধ্যে সে এত উপেক্ষিতা। পত্ৰলেখা যখন কিয়ংকাল কাদম্বরীর সহিত একত্রবাসের পর বার্তাসহ চম্রাপীড়ের নিকট ফিরিয়া আসিল, যখন স্থিতহাস্তের দ্বারা দূর হইতেই চন্দ্রাপীড়ের প্রতি প্রতি প্রকাশ করিয়া নমস্কার করিল, তখন পত্ৰলেখা প্রকৃতিবল্লভ হইলেও কাদম্বরীর নিকট হইতে প্রসাদলন্ধ আর-একটি সৌভাগ্যের স্তায় বল্লভতরতা প্রাপ্ত হইল এবং তাহাকে অতিশয় আদর দেখাইয়া যুবরাজ আসন হইতে উখিত হইয়া আলিঙ্গন করিলেন। চঙ্গাপীড়ের এই আদর, এই আলিঙ্গনের দ্বারাই পত্ৰলেখা কবিকর্তৃক অনাদৃত। আমরা বলি, কবি অন্ধ। কাদম্বরী এবং মহাশ্বেতার দিকেই ক্রমাগত একদৃষ্টে চাহিয়া তাহার চক্ষু ঝলসিয়া গেছে, এই ক্ষুদ্র বন্দিনীটিকে তিনি দেখিতে পান নাই। ইহার মধ্যে যে প্রণয়তুষার্ত চিরবঞ্চিত একটি নারীহাদয় রহিয়া গেছে সে কথা তিনি একেবারে বিশ্বত হইয়াছেন। বাণভট্টের কল্পনা মুক্তহস্ত— অস্থানে অপাত্রেও তিনি অজস্র বর্ষণ করিয়া চলিয়াছেন। কেবল র্তাহার সমস্ত কৃপণতা এই বিগতনাথ রাজদুহিতার প্রতি। তিনি পক্ষপাতদূষিত পরম অন্ধতাবশত পত্ৰলেখার হৃদয়ের নিগৃঢ়তম কথা কিছুই জানিতেন না। তিনি মনে করিতেছেন তরঙ্গলীলাকে তিনি ষে পর্যন্ত আসিবার অনুমতি করিয়াছেন সে সেই পর্যন্ত আসিয়াই থামিয়া আছে– পূর্ণ: চশ্রোদয়েও সে র্তাহার আদেশ অগ্রাহ করে নাই। তাই কাদম্বরী পড়িয়া কেবলই মনে হয়, অন্ত সমস্ত নায়িকার কথা অনাবশুক বাহুল্যের সহিত বর্ণিত হইয়াছে, কিন্তু পত্ৰলেখার কথা কিছুই বলা হয় নাই। ۹ ه ها و زTi#