পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্ৰায়শ্চিত্ত SSO সুরমা । (বিভার চিবুক ধরিয়া) দাদামশায়, বিভার হাসি দেখবার জন্যে তো আড়ালে যেতে হল না। এবার তবে দেশান্তরের উদযোগ করো। বসন্ত রায় । না না, অত সহজে না । অমনি যে ফাকি দিয়ে হেসে তাড়াবে আমি তেমন পাত্র না । কেঁদে না তাড়ালে বুড়ো বিদায় হবে না। গোটা পনেরো নতুন গান আর একমাথা পুরোনো পাকাচুল এনেছি, সমস্ত নিকেশ না করে নড়ছি নে । বিভা। মিছে বড়াই কর কেন ? আধমাথা বৈ চুলই নেই! বসন্ত রায় । (মাথায় হাত বুলাইয়া) ওরে, সে একদিন গেছে রে ভাই । বললে বিশ্বাস করবি নে, বসন্ত রায়েরও মাথায় একেবারে মাথাভরা চুল ছিল। সেদিন কি আর এত রাস্তা পেরিয়ে তোদের খোেশামোদ করতে আসতুম । সেদিন একটা চুল পেকেছে কি, অমনি পাচটা রূপসী তোেলবার জন্যে উমেদার হত। মনের আগ্রহে কঁাচাচুল সুদ্ধ উজাড় করে দেবার জো করত। সুরমা । দাদামশায়, টাকের আলোচনা পরে হবে, এখন বিভার একটা যা হয় উপায় করে দাও । বসন্ত রায় । সেও কি আমাকে আবার বলতে হবে না কি ? এতক্ষণ কী কঁরছিলুম ? এই যে বুড়োটা রয়েছে, এ কি কোনো কাজেই লাগে না মনে করছ ? গান মলিন বসন ছাড়ো সখী, পরো আভরণ । অশ্রদ্ধাধোওয়া কাজলরেখা আবার চোখে দিক-না দেখা, শিথিল বেণী তুলুক বেঁধে কুসুমবন্ধন । বিভা । দাদামশায়, সত্যি তুমি বাবার কাছে কিছু বলেছ ? বসন্ত রায় । একটা কিছু যে বলেছি তার সাক্ষী আমি থাকতে থাকতেই হাজির হবে। বিভা । কেন এমন কাজ করতে গেলে ? বসন্ত রায় । খুব করেছি, বেশ করেছি। বিভা । না দাদামশায়, আমি ভারি রাগ করেছি। বসন্ত রায় । এই বুঝি বকশিশ! যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর ! বিভা ৷ না, সত্যি বলছি, কেন তুমি বাবাকে অনুরোধ করতে গেলে ? বসন্ত রায় । দিদি, রাজার ঘরে যখন জন্মেছিস তখন অভিমান করে ফল নেই- এরা সব পাথর । বিভা । আমার নিজের জন্যে অভিমান করি বুঝি ! তিনি যে মানী, তার অপমান কেন হবে ? বসন্ত রায়। আচ্ছা বেশ, সে আমার সঙ্গে তার বােঝাপড়া হবে । ওরে, তুই এখন গান পিলু বারোয়া মান অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে এগিয়ে নিয়ে আয়তারে এগিয়ে নিয়ে আয় । চোখের জলে মিশিয়ে হাসি ঢেলে দে তার পায়ওরে ঢেলে দে তার পায় । আসছে পথে ছায়া পড়ে, গ