পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

যোগাযোগ VrS এসে দেখলে, কুমু তার শোবার ঘরের মেজের বিছানার উপর পড়ে আছে। যে চিঠিখানা ছিড়ে ফেলেছে তার বেদনা কিছুতেই মন থেকে যাচ্ছে না। নবীনকে দেখে তাড়াতাড়ি উঠে বসল। নবীন বলল, “বউদিদি, প্ৰণাম করতে এসেছি, একটু পায়ের ला प्रा9 |” . "বড়দিদির সঙ্গে নবীনের এই প্রথম কথাবার্তা । কুমু বললে, “এসো, বোসো ।” নবীন মাটিতে বসে বললে, “তোমাকে সেবা করতে পারব। এই খুশিতে বুক ভরে উঠেছিল। কিন্তু নবীনের কপালে এতটা সৌভাগ্য সইবে কেন ? ক-টা দিন মাত্র তোমাকে পেয়েছি, কিছুই করতে পারি নি এই আপসোস মনে রয়ে গেল।” কুমু জিজ্ঞাসা করলে, “কোথায় যােচ্ছ তোমরা ?” নবীন বললে, “দাদা আমাদের দেশেই পাঠাবে । এর পরে তোমার সঙ্গে বোধ হয়। আর দেখা হবার সুবিধা হবে না, তাই প্ৰণাম করে বিদায় নিতে এসেছি।” বলে যেই সে প্ৰণাম করলে মেতির মা ছুটে এসে বললে, “শীঘ্ৰ চলে এসো | কর্তা তোমার খোজ করছেন।” নবীন তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেল । মোতির মাও গেল তার সঙ্গে । সেই বাইরের ঘরে দাদা তার ডেস্কের কাছে বসে ; নবীন এসে দাঁড়াল । অন্যদিনে এমন অবস্থায় তার মুখে যেরকম আশঙ্কার ভাব থাকত আজ তা কিছুই নেই। মধুসূদন জিজ্ঞাসা করলে, “ডেস্কের চিঠির কথা বড়োবউকে কে বললে ?” নবীন বললে, “আমিই বলেছি।” “হঠাৎ তোমার এত সাহস বেড়ে উঠল। কোথা থেকে ?” । “বড়োবউরানী আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন তার দাদার চিঠি এসেছে কি না । এ বাড়ির চিঠি তো তোমার কাছে এসে প্রথমটা ঐ ডেস্কেই জমা হয়, তাই আমি দেখতে এসেছিলুম।” “তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই-” । “তিনি তো এ বাড়ির কত্রী, কেমন করে জানব তার হুকুম এখানে চলবে না ? তিনি যা বলবেন আমি তা মানব না। এতবড়ো আস্পর্ধা আমার নেই। এই আমি তোমার কাছে বলছি, তিনি তো শুধু আমার মনিব নন। তিনি আমার গুরুজন, তাকে যে মানব সে নিমক খেয়ে নয়, সে আমার ভক্তি থেকে ৷” “নবীন, তোমাকে তো এতটুকু বেলা থেকে দেখছি, এ-সব বুদ্ধি তোমার নয়। জানি তোমার বুদ্ধি কে জোগায় । যাই হােক, আজ আর সময় নেই, কাল সকালের ট্রেনে তোমাদের দেশে যেতে হবে ।” “যে আজ্ঞে” বলেই নবীন দ্বিরুক্তি না করেই দ্রুত চলে গেল । এত সংক্ষেপে ‘যে আজ্ঞে মধুসূদনের একটুও ভালো লাগল না। নবীনের কান্নাকাটি করা উচিত ছিল ; যদিও তাতে মধুসূদনের সংকল্পের ব্যত্যয় হত না। নবীনকে আবার ফিরে ডেকে বললে, "মইনে চুকিয়ে নিয়ে যাও, কিন্তু এখন থেকে তোমাদের খরচপত্র জোগাতে পারব না।” নবীন বললে, “তা জানি, দেশে আমার অংশে যে জমি আছে। তাই আমি চাষ করে খাব।” বলেই অন্য কোনো কথার অপেক্ষা না করেই সে চলে গেল । মানুষের প্রকৃতি নানা বিরুদ্ধ ধাতু মিশেল করে তৈরি, তার একটা প্রমাণ এই যে, মধুসূদন নবীনকে স্নেহ করে। তার অন্য দুই ভাই রাজবপুরে বিষয়সম্পত্তির কাজ নিয়ে পাড়াগায়ে পড়ে আছে, মধুসূদন তাদের বড়ো একটা খোজ রাখে না। পিতার মৃত্যুর পর নবীনকে মধুসূদন কলকাতায় আনিয়ে পড়াশুনো করিয়েছে এবং তাকে বরাবর রেখেছে নিজের কাছে। সংসারের কাজে নবীনের স্বাভাবিক পটুতা । তার কারণ সে খুব খাটি । আর একটা হচ্ছে, তার কথাবার্তায় ব্যবহারে সকলেই