পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V8 রবীন্দ্র-রচনাবলী “আমরাই তো খবর দিয়েছি তোমাকে ৷” “আমি যদি খবর জানতে চাই তা হলে খবর দেওয়াটা অপরাধ ?” “কর্তাকে না জানিয়ে দেওয়াটা অপরাধ ।” “তই ভালো, অপরাধ তোমরাও করেছ। আমিও করেছি। একসঙ্গেই ফল ভোগ করব।” “আচ্ছা বেশ, তা হলে বলে দেব তোমার জন্যে পালকি । বড়েঠাকুরের হুকুম হয়েছে তোমাকে বাধা দেওয়া হবে না। এখন তবে তোমার জিনিসগুলি গুছিয়ে দিই। ওগুলো নিয়ে যে ঘেমে ऐळेळत !” দুজনে গোছাতে লেগে গেল । এমন সময়ে কানে এল বাইরে জুতোর মাচু মচু ধ্বনি । মোতির মা দিল দৌড় । মধুসূদন ঘরে ঢুকেই বললে, “বড়োবউ, তুমি যেতে পারবে না।” “কেন যেতে পারব না ?” “আমি হুকুম করছি বলে ।” “আচ্ছা, তা হলে যাব না। তার পরে আর কী হুকুম বলো ।” “বন্ধ করে তোমার জিনিস প্যাক করা ।” “এই বন্ধ করলুম।” বলে কুমু উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। মধুসূদন বললে, “শোনো, শোনো ।” তখনই কুমু ফিরে এসে বললে, “কী বলে ।” বিশেষ কিছুই বলবার ছিল না। তবু একটু ভেবে বললে, “তোমার জন্যে আংটি এনেছি।” “আমার যে-আংটির দরকার ছিল সে তুমি পরতে বারণ করেছ, আর আমার আংটির দরকার নেই ।” “একবার দেখেই না চেয়ে ।” মধুসূদন একে একে কীেটাে খুলে দেখালে। কুমু একটি কথাও বললে না । “এর যেটা তোমার পছন্দ সেইটেই তুমি পরতে পারো ।” “আমি তো মনে করি তিনটেই তিন আঙুলে মানাবে।” “হুকুম কর তিনটেই পরব।” “আমি পরিয়ে দিই।” "प्रो७ श्रतिश ” মধুসূদন পরিয়ে দিলে। কুমু বললে, “আর-কিছু হুকুম আছে ?” “বড়োবাউ, রাগ করছ, কেন ?” 船 “আমি একটুও রাগ করছি নে ৷” বলে কুমু আবার ঘর থেকে চলে গেল । মধুসূদন অস্থির হয়ে বলে উঠল, “আহা, যাও কোথায় ? শোনো শোনো ।” কুমু তখনই ফিরে এসে বললে, “কী বলে ।” ভেবে পেলে না। কী বলবে। মধুসূদনের মুখ লাল হয়ে উঠল। ধিক্কার দিয়ে বলে উঠল, “আচ্ছা! যাও ।” রেগে বললে, “দাও, আংটিগুলো ফিরিয়ে দাও ।” তখনই কুমু তিনটে আংটি খুলে টিপায়ের উপর রাখলে। মধুসূদন ধমক দিয়ে বললে, “যাও চলে ।” । কুমু তখনই চলে গেল । এইবার মধুসূদন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলে যে, সে আপিসে যাবেই। তখন কাজের সময় প্রায় উত্তীৰ্ণ । ইংরেজ কর্মচারীরা সকলেই চলে গেছে টেনিস খেলায়। উচ্চতন বড়োবাবুদের দল উঠি উঠি করছে। এমন সময় মধুসূদন আপিসে উপস্থিত হয়ে একেবারে খুব কষে কাজে লেগে গেল। ছটা বাজল, সাতটা বাজল, আটটা বাজে, তখন খাতপত্র বন্ধ করে উঠে পড়ল।