পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শেবের কবিতা (OV) “তার কথা তোমার কাছে বরাবরই শুনতে পাই । কলকাতায় লিখে দিয়েছি, তার বই পাঠিয়ে দেবার জন্য ।” “সর্বনাশ ! তার বই ! সে লোকটার অন্য অনেক দোষ আছে, কিন্তু কখনো বই ছাপতে দেয় না । তার পরিচয় আমার কাছ থেকেই তোমাকে ক্ৰমে ক্রমে পেতে হবে । নইলে হয়তো-” “ভয় কোরো না মিতা, তুমি তাকে যেভাবে বােঝ আমিও তাকে সেইভাবেই বুঝে নেব, এমন ভরসা আমার আছে। আমারই জিত থাকবে ।” “কোন ৷” “আমার ভালো লাগায় যা পাই সেও আমার, আর তোমার ভালো লাগায় যা পাব সেও আমার হবে। আমার নেবার অঞ্জলি হবে দুজনের মুনকে মিলিয়ে। কলকাতায় তােমার ছােটাে ঘরের বইয়ের আলমারিতে এক শেলফেই দুই কবির কবিতা ধরতে পারব। এখন তােমার কবিতাটি বলাে।” “আর বলতে ইচ্ছে করছে না। মাঝখানে বড়ডো কতকগুলো তর্কবিতর্ক হয়ে হাওয়াটা খারাপ হয়ে গেল ।” “কিছু খারাপ হয় নি, হাওয়া ঠিক আছে।” অমিত তার কপালের চুলগুলো কপালের থেকে উপরের দিকে তুলে দিয়ে খুব দরদের সুর লাগিয়ে পড়ে গেল “সুন্দরী তুমি শুকতারা শর্বরী যবে হবে। সারা দর্শন দিয়ে দিকভ্রান্তে । বুঝেছ বন্যা, চাদ ডাক দিয়েছে শুকতারাকে, সে আপনার রাত-পোহাবার সঙ্গিনীকে চায়। নিজের রাতটার পরে ওর বিতৃষ্ণা হয়ে গেছে। ধরা যেথা অম্বরে মেশে। আমি আধো-জাগ্ৰত চন্দ্ৰ । আঁধারের বক্ষের ”পরে আধেক আলোকরেখারঞ্জ । ওর এই আধখানা জাগা, ঐ অল্প একটুখানি আলো আঁধারটাকে সামান্য খানিকটা আঁচড়ে দিয়েছে। এই হল ওর খেদ । এই স্বল্পতার জালে ওকে জড়িয়ে ফেলেছে, সেইটে ছিড়ে ফেলবার জন্যে ও যেন সমস্ত রাত্রি ঘুমোতে ঘুমোতে গুমরে উঠছে। কী আইডিয়া ! গ্র্যান্ড ! उ ऊ ( 6°05 নিদ্রাগহন মহাশূন্য । তন্ত্রী বাজাই স্বপনেতে তন্দ্ৰা ঈষৎ করি ক্ষুন্ন । কিন্তু এমন হালকা করে ধাচার বােঝাটা যে বড়ডাে বেশি ; যে নদীর জল মরেছে তার মন্থর ম্রোতের ক্লান্তিতে জঞ্জাল জমে, যে স্বল্প সে নিজেকে বইতে গিয়ে ক্লিষ্ট হয় । তাই ও বলছে মন্দচরণে চলি পারে, যাত্রা হয়েছে মোর সাঙ্গ । সুর থেমে আসে বারে বারে, ক্লান্তিতে আমি অবশ্যাঙ্গ । কিন্তু এই ক্লান্তিতেই কি ওর শেষ । ওর টিলে তারের বীণাকে নতুন করে বঁাধবার আশা ও পেয়েছে, - দিগন্তের ও-পারে কার পায়ের শব্দ ও যেন শুনল