পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዒ Sbr রবীন্দ্র-রচনাবলী সাধারণত ধর্মবুদ্ধি কর্মবুদ্ধি লোকনিন্দ সাব-কাঁটায় মিলিয়া আমাদিগকে কর্তব্যপথে চালনা করে । আমাদের গবর্মেন্টের কর্তবানীতি অনেকটা পরিমাণে কেবলমাত্র ধর্মবুদ্ধি, ও কর্মবৃদ্ধির উপরেই নির্ভর করিতেছে, প্ৰজাদিগের ন্যায়ান্যায়বোধের সহিত তাহার যোগ অতিশয় অল্প । সকলেই জানেন, ধর্মবুদ্ধির সহিত কর্মবুদ্ধির বিরোধ বাধিলে অনেক সময় শেষোক্ত শক্তিটিরই জয় হইয়া থাকে, সেই দ্বন্দ্বের সময় বাহিরের লোকের ন্যায়ান্যায়বোধ ধর্মের সহায় হইয়া তাহাকে সবল করিয়া তোলে। যখন দেখিব প্রজার নিন্দা –নামক শক্তি গবর্মেন্টের রাজকার্যের মধ্যে আপনার যথাযোগ্য স্থান অধিকার করিতে পারিয়াছে তখন আমরা আনন্দ প্ৰকাশ করিব । , এই প্ৰজানিন্দ না থাকতে ভারতবষীয় ইংরাজের কর্তবাবুদ্ধি ক্ৰমে অলক্ষিতভাবে এত শিথিল ও বিকৃত হইয়া আসে যে, ইংলন্ডবাসী ইংরাজের নৈতিক আদর্শ হইতে তাঁহাদের আদর্শের বিজাতীয় প্ৰভেদ হইতে থাকে। সেই কারণে দেখিতে পাই, ভারতবষীয় ইংরাজ এক দিকে আমাদিগকে ঘূণা করে, অপর দিকে স্বদেশীয় ইংরাজের মতামতের প্রতিও অত্যন্ত অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করে- যেন ইহার অনেকগুলি কারণ থাকিতে পারে ; তাহার মধ্যে একটি কারণ এই যে, ইংলন্ডে যে সমাজনিন্দা ইংরাজকে সর্বদাই বিশেষ কর্তব্যপথ নির্দেশ করিয়া দিতেছে ভারতবর্ষে তাহা অত্যন্ত দূরবতী হওয়াতে ভারতবষীয় ইংরাজ তাহার প্রভাব বিস্মৃত হইয়া যায় । ইহার উপরে আবার আমাদের সহিত ইংরাজের অনেকটা স্বার্থের সম্পর্ক এবং আমাদের প্রতি তাহদের স্বজাতীয়ত্বের মমতাবন্ধন নাই, সুতরাং এখানে কর্তব্য বুদ্ধির বিশুদ্ধতা রক্ষা করা ইংরাজের পক্ষে নানা কারণে কঠিন হইয়া পড়ে । সেইজন্য স্বার্থের সহিত, ক্ষমতাগর্বের সহিত, পরাধীন দুর্বল জাতির নৈতিক আদর্শের সহিত, পরজাতিশাসনতন্ত্রের বিবিধ কুটিলতার সহিত সংমিশ্রিত হইয়া ভারতবষীয় ইংরাজের একটা বিশেষ স্বতন্ত্র নূতন কর্তব্যনীতি গঠিত হইতে থাকে, তাহাকে অনেক সময় ইংলন্ডের ইংরাজ ভালো করিয়া (56न् की । কোনো কোনো প্রতিভাসম্পন্ন ভারতবষীয় ইংরাজ এই নূতন পদার্থটিকে ইংলন্ডে ভালোরূপে পরিচিত করাইবার ভার লইয়াছেন। তাহারা প্রতিভাবলে দেখাইতেছেন, এই নূতন পদার্থের নূতনত্বের একটি বিশেষ আকর্ষণ আছে । -v দৃষ্টান্তস্বরূপে রাডইয়ার্ড কিপলিঙের নাম উল্লেখ করা যাইতে পারে। তাহার অসামান্য ক্ষমতা । সেই ক্ষমতাবলে তিনি ইংরাজের কল্পনাচক্ষে প্রাচ্যদেশকে একটি বৃহৎ পশুশালার মতো দাড় করাইয়াছেন। তিনি ইংলন্ডের ইংরাজকে বুঝাইতেছেন, ভারতবষীয় গবমেন্ট একটি সার্কাস কম্পানি। তাহারা নানা-জাতীয় বিচিত্র অপরূপ জন্তুকে সভ্যজগৎসমক্ষে সুনিপুণভাবে নৃত্য করাইতেছেন। একবার সতর্ক অনিমেষ দৃষ্টি ফিরাইয়া লইলেই সব-কটা ঘাড়ের উপর আসিয়া পড়িবে। সুতীক্ষ কৌতুহলের সহিত এই জন্তুদিগের প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করিতে হইবে, যথা পরিমাণে চাবুকের ভয় এবং অস্থিখণ্ডের প্রলোভন রাখিতে হইবে এবং কিয়ৎপরিমাণে পশুবৎসল্যেরও আবশ্যক আছে । কিন্তু ইহার মধ্যে নীতি গ্ৰীতি সভ্যতা আনিতে গেলে সার্কাস রক্ষা করা দুষ্কর হইবে এবং অধিকারীমহাশয়ের পক্ষেও বিপদের সম্ভাবনা ৷ ” কেবলমাত্র প্রাণশক্তির বলে প্রবল মনুষ্যজন্তুদিগকে শাসনে সংযত রাখিয়া কেবলমাত্র অঙ্গুলির নির্দেশে তাহাদিগকে নিরীহ নৃত্যে প্রবৃত্ত করার ছবিটি ইংরাজের কাছে কৌতুকজনক মনোরম বলিয়া প্রতিভাত হইবার কথা । ইহাতে ইংরাজের মনে নূতনত্বের কৌতুহল এবং স্বজাতিগর্বের সঞ্চার করে, এবং আসন্ন বিপদকে শাসনে রাখিবার যে-একটি সুতীব্র আনন্দ আছে তাহাও ইংরাজ-প্রকৃতির নিকট পরম উপাদেয় রূপে প্ৰতীয়মান হয় । এ দিকে ইংলন্ডে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানের দলও দিনে দিনে বাড়িয়া উঠিতেছে। অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানের সাহিত্যও বিস্তারলাভ করিতেছে। ইংলন্ডের ভূমিতে অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানের মত ক্রমশ বদ্ধমূল হইয়া শাখাপল্পবিত হইতেছে। এই স্থলে ন্যায়ানুরোধে এ কথাও বলিয়া রাখা উচিত, অনেক