পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ꮉ Գ Ն8 রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রত্যাশাই করিব না, যেখানে ভারতশাসনের প্রয়োজনবশত প্রেস্টিজের দোহাই পড়িবে সেখানে বিশ্ববিধাতার দোহাই মানিব না। ইহাই ঘাড় পাতিয়া লইলাম- কিন্তু এই গুরুই যখন শিবাজির রাষ্ট্রনীতিকে অধৰ্ম বলিয়া আমাদের নিকট নীতিপ্রচার করিতে আসিবেন তখন আমরা কী করিব ? তখনো কি ইহাই বুঝিব যে, ধর্মনীিতিশাস্ত্ৰও বর্তমান ক্ষমতাশালীকেই ভয় করিয়া নিজের রায় লিখিয়া থাকেন, অতএব ধিক শিবাজি । VO রাজকুটুম্ব “নিয়ু ইন্ডিয়া” ইংরাজি কাগজখানি আমরা শ্রদ্ধার সহিত পাঠ করি। ইহার রচনায় পাঠক ভুলাইবার বাধা বুলি ও সহজ কৌশলগুলি দেখি না। সম্পাদক যে-সমস্ত প্ৰবন্ধ লেখেন তাহাতে রস। অথচ গান্তীৰ্য আছে, তাহাতে বলের অভাব নাই। অথচ পদে পদে সংযমের পরিচয় পাওয়া যায় । তাহার লেখা সাময়িক সংবাদের তুচ্ছতাকে অনেক দূর ছাড়াইয়া মাথা তুলিয়া থাকে। ১২ই মার্চের পত্রে সম্পাদক “ভারতবর্ষে য়ুরোপীয় ক্রিমিনাল’ নাম দিয়া একটি উপাদেয় প্রবন্ধ লিখিয়াছেন। বৃথা অনুবাদের চেষ্টা না করিয়া ক্রিমিনািল-শব্দটা আমরা বাংলায় গ্রহণ করিতে ইচ্ছা! করি । ما য়ুরোপীয় ক্রিমিনালদের সম্বন্ধে কেন-যে সন্দবিচার হয় না, সম্পাদক বিচারকের মতো ধীরভাবে তাহার মীমাংসা করিতে প্ৰস্তুত হইয়াছেন ।

  • তিনি বলেন, এক পক্ষে অপরিসীম সহিষ্ণুতা ও আর-এক পক্ষে অপ্রতিহত শক্তি যেখানে সম্মুখীন হয়। সেখানে স্বভাবতই এরূপ ঘটিতে বাধ্য। এ স্থলে আমরা হইলেও এমনিই কিরিতাম- এমন-কি, সম্পাদক টিপ্পানী দিয়া বলিয়াছেন, এশিয়াবাসী হয়তো সুযোগ পাইলে "রিফাইনড় পাশবিকতায় যুরোপীয়কে জিনিতে পারিত।

শুদ্ধমাত্র প্রসঙ্গক্রমে আমরাও একটি মনস্তত্ত্বের কথা বলিয়া লই। সম্পাদকের এই টিল্পনীটুকুতে একটি দুর্বলতা প্ৰকাশ পাইতেছে। তিনি নিজের বক্তব্যকে সবল করিবার জন্য অপক্ষপাতিতা দেখাইবার প্রলোভনীটুকু সংবরণ করিতে পারেন নাই। স্বজাতির প্রতি অতিমাত্র পক্ষপাতও যেমন স্থলবিশেষে একপ্রকার কৌশলমাত্র, জাতিনির্বিশেষে একান্ত অপক্ষপাতও স্থলবিশেষে সেইরূপ কৌশল ছাড়া আর-কিছু নহে। নিয়ু ইন্ডিয়ার সম্পাদকের পক্ষে এটুকুর কোনো প্রয়োজন ছিল না। কারণ, তিনি नूल नाश्न । প্রাচ্যদের সম্বন্ধে ইংরাজদের কতকগুলি বাধিবুলি আছে, আমাদের "রিফাইনড় নিষ্ঠুরতা তাহার মধ্যে একটা । পূর্ব দিকটা একটা মস্ত দিক- এ দিকে যাহারাই বাস করে তাঁহাদের সকলকে এক নামের অধীনে এক শ্রেণীতে ভুক্ত করিয়া ভূগোলাবৃত্তান্ত রচনা করিলেই যে তাহারা দানা বাধিয়া এক হইয়া যায় তাহা নহে। বিদেশীরা সামান্য বাহ্য সাদৃশ্যের ভিতর দিয়া বৈসাদৃশ্য ধরিতে পারে না। একজন চাষার চক্ষে এক গোরার সঙ্গে আর-এক গোরার ভেদ সহজে ধরা পড়ে না- ইংরাজের অনভ্যস্ত দৃষ্টিতে একজন বাঙালিও যেমন আর-একজনও প্রায় সেইরূপ। এই কারণেই য়ুরোপীয়েরা সমস্ত প্ৰাচ্যজাতিকে একটা পিণ্ড পাকাইয়া দেখে এবং সকলের দোষগুণকে একটা নামের ঝোলার মধ্যে ভরিয়া ওরিয়েন্টাল লেবুল আঁটিয়া দেয়। য়ুরোপীয়েরা আমাদের আধুনিক গুরু, সুতরাং তঁহাদের কােছ হইতে আমাদের নিজেদের সম্বন্ধে অন্ধতাটুকুও আমরা শিখিয়াছি। রিফাইনড় পাশবিকতায় এশিয়া যুরোপীয়ের চেয়ে অধিক বাহাদুরি কী পাইতে পারে, ইতিহাস ঘাঁটিয়া তাহার প্রমাণ সংগ্ৰহ করিতে চাহি না। কিন্তু স্বজাতিপক্ষপাতের অপবাদটুকু শিরোধাৰ্য করিয়া এ কথা অন্তরের সহিত, দৃঢ়বিশ্বাসের সহিত বলিতে পারি যে, হিন্দুকে