পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S@ じ রবীন্দ্র-রচনাবলী তারি তলে সবে মিলি চলিতেছে নিরিবিলি সুখে দুঃখে দিবসের কাজ । কোথা হতে নিদ্রাহীন রৌদ্রদগ্ধ দীর্ঘ দিন কোকিল গাহিছে কুহুস্বরে । সেই পুরাতন তান প্রকৃতির মর্মগান। পশিতেছে মানবের ঘরে । বসি আঙিনার কোণে গম ভাঙে দুই বোনে, গান গাহে শ্রান্তি নাহি মানি । বাধা কৃপ, তরুতল, বালিকা তুলিছে। জল খরতাপে স্নানমুখখানি । দূরে নদী, মাঝে চর— বসিয়া মাচার ‘পর শস্যখেত আগলিছে চাষি । রাখালশিশুরা জুটে নাচে গায় খেলে ছুটে, দূরে তরী চলিয়াছে ভাসি । কত কাজ কত খেলা কত মানবের মেলা, সুখদুঃখ ভাবনা অশেষ— তারি মাঝে কুহুস্বর একতান সকাতার কোথা হতে লভিছে প্ৰবেশ । নিখিল করিছে মগ্ন- জড়িত মিশ্রিত ভগ্ন গীতহীন কলরব কত, পড়িতেছে তারি পর পরিপূর্ণ সুধাস্বর পরিস্ফুট পুষ্পটির মতো । এত কাণ্ড, এত গোল, বিচিত্র এ কলরোল সংসারের আবর্তবিভ্ৰমেতবু সেই চিরকাল অরণ্যের অন্তরাল কুহুধ্বনি ধ্বনিছে পঞ্চমে । যেন কে বসিয়া আছে বিশ্বের বক্ষের কাছে যেন সেই রূপবতী সংগীতের সরস্বতী সম্মোহন বীণা করে ধরি’- সুকুমার কর্ণে তার ব্যথা দেয় অনিবার গণ্ডগোল দিবসে নিশীথে, জটিল সে বাঞ্ছনায়। বাধিয়া তুলিতে চায় সৌন্দর্যের সরল সংগীতে । তাই ওই চিরদিন ধবনিতেছে শ্রান্তিহীন কুহুতান, করিছে কাতরসংগীতের ব্যথা বাজে, মিশিয়াছে তার মাঝে করুণার অনুনয়স্বর।