পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

প্রকৃতির প্রতিশোধ \Oa\) স্ত্রী। জানি গাে জানি, তোমরা পুরুষ-মানুষ, তোমাদের পাষাণ প্ৰাণ । প্রথম পুরুষ । আচ্ছা, আমাদের পাষাণ প্রাণই। যদি হবে, তবে ফুলশরকে কেন ডরাই ? অন্য সকলের প্রতি কী বল ভাই ? যদি পাষাণই হবে তবে কি আর ফুলশরের আঁচড় লাগে ! দ্বিতীয় পুরুষ । বাহবা, বেশ বলেছ। তৃতীয় পুরুষ। শাবাশ খুড়ো, শাবাশ ! চতুর্থ পুরুষ । (স্ত্রীলোকের প্রতি) কেমন ! এখন জবাব দাও । প্রথম পুরুষ । না, তাই বলছি । তোমরা তো দশজন আছ, তোমরাই বিচার করে বলো-না কেন, যদি পাষাণ প্ৰাণই হবে তবে— পঞ্চম পুরুষ । ঠিক কথা বলেছ। তুমি না হলে আমাদের মুখরক্ষা করত কে ! ষষ্ঠ পুরুষ । খুড়ো এক-একটা কথা বড়ো সরেস বলে । সপ্তম পুরুষ ! হাঃ, আমিও আমন বলতে পারতুম । ও কি আর নিজে বলে ? কোন এক পুঁথি থেকে পড়ে বলছে । অষ্টম পুরুষ। (আসিয়া) কী হে, কী কথাটা হচ্ছে ? কী কথাটা হচ্ছে ? প্রথম পুরুষ । শোনো, তোমায় বুঝিয়ে বলি । এই উনি বলছিলেন, তোমরা পুরুষ-মানুষ, তোমাদের পাষাণ প্ৰাণ । তাইতে আমি বললেম, আচ্ছা যদি পাষাণ প্ৰাণই হবে, তবে ফুলশরের আঁচড় লাগবে কী করে ? বুঝেছি ভাবখানা ? অর্থাৎ যদি— অষ্টম পুরুষ । আমাকে আর বোঝাতে হবে না দাদা ! আমি আর বুঝি নি ! আজি বাইশ বৎসর ধরে আমি নিজ শহরে গুড়ের কারবার করে আসছি, আর একটা মানে বুঝতে পারব না। এ কোন কথা ! প্রথম পুরুষ । (স্ত্রীলোকের প্রতি) কেমন, এখন একটা জবাব দাও । সকল স্ত্রীলোকে মিলিয়া গান কথা কোস নে লো রাই, শ্যামের বড়াই বড়ো বেড়েছে। কে জানে ও কেমন করে মন কেড়েছে । শুধু ধীরে বাজায় বঁশি, শুধু হাসে মধুর হাসি, গোপিনীদের হৃদয় নিয়ে তবে ছেড়েছে । একজন পুরুষের গান প্রিয়ে, তোমার টেকি হলে যেতেম বেঁচে রাঙা চরণতলে নেচে নেচে । টিপঢিপিয়ে যেতেম মারা, মাথা খুঁড়ে হতেম সারা, কানের কাছে কচকচিয়ে মানটি তোমার নিতেম। যেচে । দ্বিতীয় পুরুষ । বাহবা দাদা, বেশ গেয়েছা! তৃতীয় পুরুষ । বেশ, বেশ, শাবাশ ! গুণ পুরুষ। আরে দূর, ওকে কি আর গান বলে ! গাইত বটে নিতাই , যে হী, শুনে চক্ষু দিয়ে পড়ত । [প্ৰস্থান