পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዒ (፩br রবীন্দ্র-রচনাবলী ত্ৰিয়ন্ত্রিংশ পরিচ্ছেদ দ্রুতগামী দূত পঠাইয়া দিলেন । সেখানে কুকি-গ্রামপতিদের নিকটে কুকি-সৈন্য সাহায্য প্রার্থন করিলেন । যুদ্ধের নাম শুনিয়া তাহারা নাচিয়া উঠিল। কুকিদের যত লাল (গ্রামপতি) ছিল তাহার যুদ্ধের সংবাদস্বরূপ লাল বস্ত্রখণ্ডে বাধা দা দূতহস্তে গ্রামে গ্রামে পঠাইয়া দিল । দেখিতে দেখিতে কুকির স্রোত চট্টগ্রামের শৈলশৃঙ্গ হইতে ত্রিপুরার শৈলশৃঙ্গে আসিয়া পড়িল । তাহাদিগকে কোনো নিয়মের মধ্যে সংযত করিয়া রাখাই দায় । বিন্ধন স্বয়ং ত্রিপুরার গ্রামে গ্রামে গিয়া জুম হইতে বাছিয়া বাছিয়া সাহসী যুবপুরুষদিগকে সৈন্যশ্রেণীতে সংগ্ৰহ করিয়া আনিলেন । অগ্রসর হইয় মোগল সৈন্যদিগকে আক্রমণ করা বিন্ধন ঠাকুর সংগত বিবেচনা করিলেন না । যখন তাহারায় সমতলক্ষেত্র অতিক্রম কবিয়া অপেক্ষাকৃত দুৰ্গম শৈলশৃঙ্গে আসিয়া উপস্থিত হইবে, তখন অরণ্য, পর্বত্ত ও নানা দুৰ্গম গুপ্ত স্থান হইতে তাহাদিগকে সহসা আক্রমণ করিয়া চকিত করিবেন স্থির করিলেন বড়ো বড়ো শিলাখণ্ডের দ্বারা গোমতী নদীর জল বাধিয়া রাখিলেন— নিতান্ত পরাভাবের আশঙ্কা দেখিলে সেই র্বাধি ভাঙিয়া দিয়া জলপ্লাবনের দ্বারা মোগল সৈন্যদিগকে ভাসাইয়া দেওয়া যাইতে পরিবে । এ দিকে নক্ষত্ররায় দেশ লুণ্ঠন করিতে করিতে ত্রিপুরার পার্বত্য প্রদেশে আসিয়া পৌছিলেন । তখন জুম কাটা শেষ হইয়া গেছে। জুমিয়ারা সকলেই দা ও তীরন্ধনু হাতে করিয়া যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইয়াছে। কুকিদলকে উচ্ছাসোন্মুখ জলপ্রপাতের মতো আর বঁাধিয়া রাখা যায় না । গোবিন্দমাণিক্য বলিলেন, “আমি যুদ্ধ করিব না।” বিন্ধন ঠাকুর কহিলেন, “এ কোনো কাজের কথাই নহে ।” রাজা কহিলেন, “আমি রাজত্ব করিবার যোগ্য নাহি ; তাহারই সকল লক্ষণ প্ৰকাশ পাইতেছে সেইজন্য আমার প্রতি প্রজাদের বিশ্বাস নাই, সেইজন্যই দুর্ভিক্ষের সূচনা, সেইজন্যই এই যুদ্ধ রাজ্য-পরিত্যাগের জন্য এ-সকল ভগবানের আদেশ ।” বিন্ধন কহিলেন, “এ কখনোই ভগবানের আদেশ নহে। ঈশ্বর তোমার উপরে রাজ্যভার অর্পণ করিয়াছেন ; যতদিন রাজকাৰ্য নিঃসংকট ছিল ততদিন তোমার সহজ কর্তব্য অনায়াসে পালন করিয়াছ যখনই রাজ্যভার গুরুতর হইয়া উঠিয়াছে তখনই তাহা দূরে নিক্ষেপ করিয়া তুমি স্বাধীন হইতে চাহিতেছ। এবং ঈশ্বরের আদেশ বলিয়া আপনাকে ফাকি দিয়া সুখী করিতে চাহিতেছ।” কথাটা গোবিন্দমাণিক্যের মনে লাগিল। তিনি নিরুত্তর হইয়া কিছুক্ষণ বসিয়া রহিলেন । অবশেষে নিতান্ত কাতর হইয়া বলিলেন, “মনে করো না ঠাকুর, আমার পরাজয় হইয়াছে, নক্ষত্র আমাকে বধ বিম্বন কহিলেন, “যদি সত্য তাহাই ঘটে তাহা হইলে আমি মহারাজের জন্য শোক করিব না। কিন্তু মহারাজ যদি কর্তব্যে ভঙ্গ দিয়া পলায়ন করেন, তবেই আমাদের শোকের কারণ ঘটিবে ।” င်္ချို ཡུགི་ কহিলেন, “আপনি . ভাইয়ের রক্তপাত করিব।” কী উপদেশ দিয়াছিলেন স্মরণ করিয়া দেখুন।” যুদ্ধের সময় শ্ৰীকৃষ্ণ রব ?” বিম্বন কহিলেন, “ই ।” ਅੰਕ ধুব খেলা করিতেছিল, দুই পক্ষের কী একটা গােলমাল শুনিয়া সহসা তাহার মনে হইল দুইজনে অবশ্যই একটা দুষ্টামি করিতেছে, অতএব সময় থাকিতে দুইজনকে কিঞ্চিৎ শাসন করিয়া আসী।