পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৪৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SS 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী লজ্জা হইতে রক্ষা করে, কিন্তু যখন-তখন উনপঞ্চাশ বায়ু-বেগে চতুর্দিকে উড়-উড় করে না । এক-আধটা বোতামের ছিদ্ৰ দিয়া বাহিরের চোরা হাওয়া উহার মানস-আবরণের ভিতরে প্রবেশ করিয়৷ তাহাকে যে কখনাে একটু-আধটু স্ফীত করিয়া তােলে না। তাহা বলিতে পারি না, কিন্তু ততটুকু মনশ্চাঞ্চল্য তাহার জীবনের স্বাস্থ্যের পক্ষেই বিশেষ আবশ্যক । डाछे ७०० ७२७७ দীপ্তি কহিল— সত্য কথা বলিতেছি, আমার তো মনে হয়। আজকাল প্রকৃতির স্তব লইয়া তোমরা সকলে কিছু বাড়াবাড়ি আরম্ভ করিয়াছ । আমি কহিলাম— দেবী, আর-কাহারও স্তব বুঝি তোমাদের গায়ে সহে না ? দীপ্তি কহিল— যখন স্তব ছাড়া আর বেশি কিছু পাওয়া যায় না, তখন ওটার অপব্যয় দেখিতে 2ादि न्ा | সমীর অত্যন্ত বিনম্রমনোহর হাস্যে গ্ৰীবা আনমিত করিয়া কহিল— ভগবতী, প্রকৃতির স্তব এবং তোমাদের স্তবে বড়ো একটা প্ৰভেদ নাই । ইহা বোধ হয় লক্ষ্য করিয়া দেখিয়া থাকিবে, যাহারা প্রকৃতির স্তবগান রচনা করিয়া থাকে তাহারা তোমাদেরই মন্দিরের প্রধান পূজারি । দীপ্তি অভিমানভারে কহিল- অর্থাৎ যাহারা জড়ের উপাসনা করে তাহারাই আমাদের ভক্ত । সমীর কহিল— এত বড়ো ভুলটা বুঝিলে, কাজেই একটা সুদীর্ঘ কৈফিয়ত দিতে হয় । আমাদের ভূতসভার বর্তমান সভাপতি শ্রদ্ধাস্পদ শ্ৰীযুক্ত ভূতনাথবাবু তার ডায়ারিতে মন-নামক একটা দুরন্ত পদার্থের উপদ্রবের কথা বর্ণনা করিয়া যে-একটি প্রবন্ধ লিখিয়াছেন সে তোমরা সকলেই পাঠ করিয়াছ । আমি তাহার নীচেই গুটিকতক কথা লিখিয়া রাখিয়াছি, যদি সভ্যগণ অনুমতি করেন তবে পাঠ করি।-- আমার মনের ভাবটা তাহাতে পরিষ্কার হইবে । ক্ষিতি করজোড়ে কহিল— দেখো ভাই সমীরণ, লেখক- এবং পাঠকে যে সম্পর্ক সেইটেই স্বাভাবিক সম্পর্ক— তুমি ইচ্ছা করিয়া লিখিলে, আমি ইচ্ছা করিয়া পড়িলাম, কোনো পক্ষে কিছু বলিবার রহিল। না । যেন খাপের সহিত তরবারি মিলিয়া গেল। কিন্তু তরবারি যদি অনিচ্ছুক অস্থিচর্মের মধ্যে সেইপ্রকার সুগভীর আত্মীয়তা স্থাপনে প্রবৃত্ত হয় তবে সেটা তেমন বেশ স্বাভাবিক এবং মনোহররূপে সম্পন্ন হয় না । লেখক এবং শ্রোতার সম্পর্কটাও সেইরূপ অস্বাভাবিক, অসদৃশ । হে চতুরানন, পাপের যেমন শাস্তিই বিধান কর, যেন আর-জন্মে ডাক্তারের ঘোড়া, মাতালের স্ত্রী এবং প্রবন্ধলেখকের বন্ধু হইয়া জন্মগ্রহণ না করি । ব্যোম একটা পরিহাস করিতে চেষ্টা করিল, কহিল- একে তো বন্ধু অর্থেই বন্ধন, তাহার উপরে প্রবন্ধবন্ধন হইলে ফাসের উপরে ফাস হয় : গণ্ডস্যোপরি বিস্ফোটকম। দীপ্তি কহিল— হাসিবার জন্য দুইটি বৎসর সময় প্রার্থনা করি ; ইতিমধ্যে পাণিনি অমরকোষ এবং ধাতুপাঠ আয়ত্ত করিয়া লইতে হইবে । শুনিয়া ব্যোম অত্যন্ত কৌতুকলাভ করিল । হাসিতে হাসিতে কহিল— বড়ো চমৎকার বলিয়াছ ; আমার একটা গল্প মনে পড়িতেছে স্রোতস্বিনী কহিল— তোমরা সমীরের লেখাটা আজ আর শুনিতে দিবে না দেখিতেছি । সমীর, তুমি পড়ে, উহাদের কথায় কৰ্ণপাত করিয়ো না। স্রোতস্বিনীর আদেশের বিরুদ্ধে কেহ আর আপত্তি করিল না। এমন-কি, স্বয়ংক্ষিতি শেলফের ಙ್ಗಗ್রর খাতাটি পাড়িয়া আনিল এবং নিতান্ত নিরীহ নিরুপায়ের মতো সংযত হইয়া সমীর পড়িতে লাগিল- মানুষকে বাধ্য হইয়া পদে পদে মনের সাহায্য লইতে হয়, এইজন্য