পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (প্রথম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৯৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

s)○8 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী দীপ্তি কহিলেন- তোমরা কী প্ৰমাণ করিবার জন্য উদ্যত হইয়াছ ? ক্ষিতি কহিল- আমরা প্ৰমাণ করিতেছিলাম যে, তোমরা এতক্ষণ বিনা কারণে হাসিতেছিলে । শুনিয়া দীপ্তি স্রোতস্বিনীর মুখের দিকে চাহিলেন, স্রোতস্বিনী দীপ্তির মুখের দিকে চাহিলেন এবং উভয়ে পুনরায় কলকণ্ঠে হাসিয়া উঠিলেন । ব্যোম কহিল— আমি প্ৰমাণ করিতে যাইতেছিলাম যে, কমেডিতে পরের অল্প পীড়া দেখিয়া আমরা হাসি এবং ট্র্যাজেডিতে পরের অধিক পীড়া দেখিয়া আমরা কাদি । দীপ্তি ও স্রোতস্বিনীর সুমিষ্ট সম্মিলিত হাস্যরবে পুনশ্চ গৃহ কৃজিত হইয়া উঠিল, এবং অনৰ্থক হাস্য সখী গৃহ হইতে প্ৰস্থান করিলেন । পুরুষ সভ্যগণ এই অকারণ হাস্যোেচ্ছ সদৃশ্যে স্মিতমুখে অবাক হইয়া রহিল। কেবল সমীর কহিল— ব্যোম, বেলা অনেক হইয়াছে, এখন তোমার ঐ বিচিত্ৰবর্ণের নাগপাশবন্ধনটা খুলিয়া ফেলিলে স্বাস্থ্যহানির সম্ভাবনা দেখি না । ক্ষিতি ব্যোমের লাঠিগাছটি তুলিয়া অনেকক্ষণ মনোযোগের সহিত নিরীক্ষণ করিয়া কহিল— ব্যোম, তোমার এই গদাখানি কি কমেডির বিষয় না। ট্র্যাজেডির উপকরণ ? পৌষ ১৩০১ কৌতুকহাস্যের মাত্রা সেদিনকার ডায়ারিতে কৌতুকহাস্য সম্বন্ধে আমাদের আলোচনা পাঠ করিয়া শ্ৰীমতী দীপ্তি লিখিয়া একদিন প্ৰাতঃকালে স্রোতস্বিনীতে আমাতে মিলিয়া হাসিয়াছিলাম । ধন্য সেই প্ৰাতঃকাল এবং ধন্য দুই সখীর হাস্য। জগৎ সৃষ্টি অবধি এমন চাপল্য অনেক রমণীই প্রকাশ করিয়াছে, এবং ইতিহাসে তাহার ফলাফল ভালোমন্দ নানা আকারে স্থায়ী হইয়াছে । নারীর হাসি অকারণ হইতে পারে, কিন্তু তাহা অনেক মন্দাক্রান্তা, উপেন্দ্ৰবজা, এমন-কি, শার্দুলবিক্ৰীড়িতচ্ছন্দ, অনেক ত্রিপদী, চতুষ্পদী এবং চতুৰ্দশপদীর আদিকারণ হইয়াছে এইরূপ শুনা যায়। রমণী তরলস্বভাব্যবশত অনৰ্থক হাসে, মাঝের গলায় দড়ি দিয়া মরে— আবার এইবার দেখিলাম নারীর হাস্যে প্ৰবীণ ফিলজাফরের মাথায় নবীন ফিলজফি বিকশিত হইয়া উঠে। কিন্তু সত্য কথা বলিতেছি, তত্ত্বনির্ণয় অপেক্ষা পূর্বোক্ত তিন প্রকারের অবস্থাটা আমরা পছন্দ করি । এই বলিয়া সেদিন আমরা হাস্য সম্বন্ধে যে সিদ্ধান্তে উপনীত হইয়াছিলাম শ্ৰীমতী দীপ্তি তাহাকে যুক্তিহীন অপ্ৰমাণিক বলিয়া প্রমাণ করিয়াছেন । আমার প্রথম কথা এই যে, আমাদের সেদিনকার তত্ত্বের মধ্যে যে যুক্তির প্রাবল্য ছিল না, সেজন্য শ্ৰীমতী দীপ্তির রাগ করা উচিত হয় না। কারণ, নারীহাস্যে পৃথিবীতে যত প্রকার অনৰ্থপাত করে তাহার মধ্যে বুদ্ধিমানের বুদ্ধিভ্রংশও একটি । যে অবস্থায় আমাদের ফিলজফি প্ৰলাপ হইয়া উঠিয়াছিল সে অবস্থায় নিশ্চয়ই মনে করিলেই কবিতা লিখিতেও পারিতাম, এবং গলায় দড়ি দেওয়াও অসম্ভব হইত না । দ্বিতীয় কথা এই যে, তাহদের হাস্য হইতে আমরা তত্ত্ব বাহির করিব। এ কথা তাহারা যেমন কল্পনা করেন নাই, আমাদের তত্ত্ব হইতে র্তাহারা যে যুক্তি বাহির করিতে বসিবেন তাহাও আমরা কল্পনা করি क्राष्ट्रि । নিউটন আজন্ম সত্যান্বেষণের পর বলিয়াছেন, আমি জ্ঞানসমুদ্রের কুলে কেবল নুড়ি কুড়াইয়াছি । আমরা চার বুদ্ধিমানে ক্ষণকালের কথোপকথনে নুড়ি কুড়াইবার ভরসাও রাখি না— আমরা বালির ঘর