পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ মানভঞ্জন প্রথম পরিচ্ছেদ রমানাথ শীলের ত্রিতল অট্টালিকায় সর্বোচ্চ তলের ঘরে গোপীনাথ শীলের স্ত্রী গিরিবালা বাস করে। শয়নকক্ষের দক্ষিণ দ্বারের সম্মুখে ফুলের টবে গুটিকতক বেলফুল এবং গোলাপফুলের গাছ ; ছাতটি উচ্চ প্রাচীর দিয়া ঘেরা– বহির্দৃপ্ত দেখিবার জন্য প্রাচীরের মাঝে মাঝে একটি করিয়া ইট ফাক দেওয়া আছে। শোবার ঘরে নানা বেশ এবং বিবেশ -বিশিষ্ট বিলাতি নারীমূর্তির বাধানে এনগ্রেভিং টাঙানো রহিয়াছে ; কিন্তু প্রবেশদ্বারের সম্মুখবর্তী বৃহৎ আয়নার উপরে ষোড়শী গৃহস্বামিনীর যে প্রতিবিম্বটি পড়ে তাহা দেয়ালের কোনো ছবি অপেক্ষ সৌন্দর্যে নূ্যন নহে। গিরিবালার সৌন্দর্য অকস্মাং আলোকরশ্মির ন্যায়, বিস্ময়ের ন্যায়, নিদ্রাভঙ্গে চেতনার ন্যায়, একেবারে চকিতে আসিয়া আঘাত করে এবং এক আঘাতে অভিভূত করিয়া দিতে পারে। তাহাকে দেখিলে মনে হয়, ইহাকে দেখিবার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না ; চারি দিকে এবং চিরকাল যেরূপ দেখিয়া আসিতেছি এ একেবারে হঠাৎ তাহা হইতে অনেক স্বতন্ত্র । গিরিবালাও আপন লাবণ্যোচ্ছাসে আপনি আদ্যোপাস্ত তরঙ্গিত হইয়া উঠিয়াছে। মদের ফেনা যেমন পাত্র ছাপিয়া পড়িয়া যায়, নবযৌবন এবং নবীন সৌন্দর্য তাহার সর্বাঙ্গে তেমনি ছাপিয়া পড়িয়া যাইতেছে। তাহার বসনে ভূষণে গমনে, তাহার বাহুর বিক্ষেপে, তাহার গ্রীবার ভঙ্গীতে, তাহার চঞ্চল চরণের উদাম ছন্দে, নূপুরনিকণে, কঙ্কণের কিঙ্কিণীতে, তরল হাস্তে, ক্ষিপ্ৰ ভাষায়, উজ্জ্বল কটাক্ষে, একেবারে উচ্ছৃঙ্খল ভাবে উদবেলিত হইয়া উঠিতেছে। আপন সর্বাঙ্গের এই উচ্ছলিত মদির রসে গিরিবালার একটা নেশা লাগিয়াছে। প্রায় দেখা যাইত, একখানি কোমল রঙিন বম্বে আপনার পরিপূর্ণ দেহখানি জড়াইয়া