পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२S ० রবীন্দ্র-রচনাবলী সেই উপলক্ষে ষাট-পয়ষট্টি টাকা ভরির তামাকের গল্প পাড়িতেন ; এবং জিজ্ঞাসা করিতেন, সে তামাক কাহারো অস্বাদ করিয়া দেখিবার ইচ্ছা আছে কি না । সকলেই জানিত যে যদি কেহ ইচ্ছা প্রকাশ করে তবে নিশ্চয় চাবির সন্ধান পাওয়া যাইবে না অথবা অনেক অন্বেষণের পর প্রকাশ পাইবে যে, পুরাতন ভৃত্য গণেশ বেট কোথায় যে কী রাখে তাহার আর ঠিকানা নাই— গণেশও বিনা প্রতিবাদে সমস্ত অপবাদ স্বীকার করিয়া লইবে । এইজন্যই সকলেই একবাক্যে বলিত, “ঠাকুরদামশায়, কাজ নেই, সে তামাক আমাদের সহ হবে না, আমাদের এই ভালো ।” শুনিয়া ঠাকুরদা দ্বিরুক্তি না করিয়া ঈষৎ হাস্ত করিতেন। সকলে বিদায় লইবার কালে বৃদ্ধ হঠাৎ বলিয়া উঠিতেন, “সে যেন হল, তোমরা কবে আমার এখানে খাবে বলো দেখি ভাই ।” অমনি সকলে বলিত, “সে একটা দিন ঠিক করে দেখা যাবে।” ঠাকুরদামহাশয় বলিতেন, “সেই ভালো, একটু বৃষ্টি পড় ক, ঠাণ্ড হোক, নইলে এ গরমে গুরুভোজনটা কিছু নয়।” যখন বৃষ্টি পড়িত তখন ঠাকুরদাকে কেহ তাহার প্রতিজ্ঞ স্মরণ করাইয়া দিত না ; বরঞ্চ কথা উঠিলে সকলে বলিষ্ঠ, “এই বৃষ্টিবাদলট না ছাড়লে সুবিধে হচ্ছে না।” ক্ষুদ্র বাসাবাড়িতে বাস করাটা তাহার পক্ষে ভালো দেখাইতেছে না এবং কষ্টও হইতেছে এ কথা তাহার বন্ধুবান্ধব সকলেই তাহার সমক্ষে স্বীকার করিত, অথচ কলিকাতায় কিনিবার উপযুক্ত বাড়ি খুজিয়া পাওয়া যে কত কঠিন সে বিষয়েও কাহারে সন্দেহ ছিল না— এমন-কি, আজ ছয় সাত বৎসর সন্ধান করিয়া ভাড়া লইবার মতো একটা বড়ো বাড়ি পাড়ার কেহ দেখিতে পাইল না— অবশেষে ঠাকুরদামশায় বলিতেন, “ত হোক ভাই, তোমাদের কাছাকাছি আছি এই আমার মুখ । নয়নজোড়ে বড়ো বাড়ি তো পড়েই আছে, কিন্তু সেখানে কি মন টেকে ” আমার বিশ্বাস, ঠাকুরদাও জানিতেন যে সকলে তাহার অবস্থা জানে এবং যখন তিনি ভূতপূর্ব নয়নজোড়কে বর্তমান বলিয়া ভাণ করিতেন এবং অন্য সকলেও তাঁহাতে যোগ দিত তখন তিনি মনে মনে বুঝিতেন যে, পরস্পরের এই ছলনা কেবল পরম্পরের প্রতি সৌহার্দবশত । কিন্তু আমার বিষম বিরক্তি বোধ হইত। অল্পবয়সে পরের নিরীহ গর্বও দমন করিতে ইচ্ছা করে এবং সহস্র গুরুতর অপরাধের তুলনায় নির্বুদ্ধিতাই সর্বাপেক্ষ অসহ বোধ হয়। কৈলাসবাৰু ঠিক নির্বোধ ছিলেন না, কাজে কর্মে র্তাহার সহায়ত এবং পরামর্শ সকলেই প্রার্থনীয় জ্ঞান করিত। কিন্তু নয়নজোড়ের গৌরব প্রকাশ