পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

*Sు রবীন্দ্র-রচনাবলী অত্যস্ত হৰ্ষিতচিত্তে লাটসাহেবের মুখে প্রাচীন নয়নজোড়-বংশের বিস্তর কাল্পনিক গুণানুবাদ বসাইতেছিলেন । বালিকা তাহাই শুনিয়া মহোৎসাহ প্রকাশ করিতেছিল। বৃদ্ধ অভিভাবকের প্রতি মাতৃহৃদয় এই ক্ষুদ্র বালিকার সকরুণ ছলনায় আমার দুই চক্ষে জল ছল ছল করিয়া আসিল। অনেক ক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রছিলাম ; অবশেষে ঠাকুরদা তাহার কাহিনী সমাপন করিয়া চলিয়া আসিলে আমার প্রতারণার বমালগুলি লইয়া বালিকার নিকট উপস্থিত হইলাম এবং নিঃশব্দে তাহার সম্মুখে রাখিয়া চলিয়া অগসিলাম । বর্তমান কালের প্রথানুসারে অন্যদিন বৃদ্ধকে দেখিয়া কোনোপ্রকার অভিবাদন করিতাম না ; আজ র্তাহাকে প্রণাম করিলাম। বৃদ্ধ নিশ্চয় মনে ভাবিলেন, গতকল্য ছোটোলাট তাহার বাড়িতে আসাতেই সহসা তাহার প্রতি আমার ভক্তির উদ্রেক হইয়াছে। তিনি পুলকিত হইয়া শতমুখে ছোটোলাটের গল্প বানাইয়া বলিতে লাগিলেন, আমিও কোনো প্রতিবাদ না করিয়া তাহাতে যোগ দিলাম । বাহিরের অন্ত লোক যাহারা শুনিল তাহারা এ কথাটাকে আদ্যোপাস্ত গল্প বলিয়া স্থির করিল, এবং সকৌতুকে বৃদ্ধের সহিত সকল কথায় সায় দিয়া গেল। সকলে উঠিয়া গেলে আমি অত্যন্ত সলজ্জমুখে দীনভাবে বৃদ্ধের নিকট একটি প্রস্তাব করিলাম। বলিলাম, যদিও নয়নজোড়ের বাবুদের সহিত আমাদের বংশমর্যাদার তুলনাই হইতে পারে না, তথাপি— প্রস্তাবটা শেষ হইবামাত্র বৃদ্ধ আমাকে বক্ষে আলিঙ্গন করিয়া ধরিলেন এবং আনন্দবেগে বলিয়া উঠিলেন, “আমি গরিব— আমার যে এমন সৌভাগ্য হবে তা আমি জানতুম না ভাই, আমার কুসুম অনেক পুণ্য করেছে তাই তুমি আজ ধরা দিলে ।” বলিতে বলিতে বৃদ্ধের চক্ষু দিয়া জল পড়িতে লাগিল । বৃদ্ধ, আজ এই প্রথম র্তাহার মহিমান্বিত পূর্বপুরুষদের প্রতি কর্তব্য বিস্তৃত হইয়া স্বীকার করিলেন যে তিনি গরিব, স্বীকার করিলেন যে আমাকে লাভ করিয়া নয়নজোড়-বংশের গৌরবহানি হয় নাই । আমি যখন বৃদ্ধকে অপদস্থ করিবার জন্য চক্রাস্ত করিতেছিলাম তখন বৃদ্ধ আমাকে পরম সৎপাত্র জানিয়া একান্ত মনে কামনা করিতেছিলেন। द्नेछार्छ S७० २