পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ + R)న এই সুন্দরী মেয়েটিকে দেখিয়া মুকুনীবাবু তাহার পোষ্যপুত্রের সহিত ইহার বিবাহ দিবার প্রস্তাব গৌরীকান্তের নিকট উত্থাপিত করিয়াছিলেন। প্রভূভক্তিতে গৌরীকান্ত কাহারে নিকটে নূ্যন ছিলেন না; তিনি প্রভুর জন্য প্রাণ দিতে পারিতেন এবং তাহার অবস্থার যতই উন্নতি হউক এবং কর্তা তাহার প্রতি বন্ধুর ন্যায় ব্যবহার করিয়া তাহাকে যতই প্রশ্রয় দিন, তিনি কখনো ভ্ৰমেও স্বপ্নেও প্রভূর সম্মান বিস্মৃত হন নাই ; প্রভুর সম্মুখে, এমন-কি, প্রভুর প্রসঙ্গে তিনি যেন সন্নত হইয়া পড়িতেন— কিন্তু এই বিবাহের প্রস্তাবে তিনি কিছুতেই সম্মত হন নাই। প্রভূভক্তির দেন। তিনি কড়ায় গণ্ডায় শোধ করিতেন, কুলমর্যাদার পাওনা তিনি ছাড়িবেন কেন। মুকুন্দলালের পুত্রের সহিত তিনি র্তাহার পৌত্রীর বিবাহ দিতে পারেন না। * ভূত্যের এই কুলগর্ব মুকুন্দলালের ভালো লাগে নাই। তিনি আশা করিয়াছিলেন এই প্রস্তাবের দ্বারা তাহার ভক্ত সেবকের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করা হইবে ; গৌরীকান্ত যখন কথাটা সেভাবে লইলেন না তখন মুকুন্দলাল কিছুদিন তাহার সহিত বাক্যলাপ বন্ধ করিয়া তাহাকে অত্যস্ত মনঃকষ্ট দিয়াছিলেন। প্রভুর এই বিমুখভাব গৌরীকাস্তের বক্ষে মৃত্যুশেলের ন্যায় বাজিয়াছিল, কিন্তু তথাপি তিনি তাহার পৌত্রীর সহিত এক পিতৃমাতৃহীন দরিদ্র কুলীনসস্তানের বিবাহ দিয়া তাহাকে ঘরে পালন করিয়া নিজের অর্থে শিক্ষাদান করিতে লাগিলেন । সেই কুলমদগর্বিত পিতামহের পৌত্রী ইন্দ্রাণী তাহার প্রভূগৃহে গিয়া আহার করিল না ; ইহাতে তাহার প্রভুপত্নী নয়নতারার অন্ত:করণে মুমধুর প্রতিরস উদবেলিত হইয়া উঠে নাই সে কথা বলা বাহুল্য। তখন ইন্দ্রাণীর অনেকগুলি স্পধর্ণ নয়নতারার বিদ্বেষকষায়িত কল্পনাচক্ষে প্রকাশ পাইতে লাগিল । প্রথম, ইন্দ্রাণী অনেক গহনা পরিয়া অত্যন্ত সুসজ্জিত হইয়া আসিয়াছিল। মনিব-বাড়িতে এত ঐশ্বর্যের আড়ম্বর করিয়া প্রভুদের সহিত সমকক্ষতা দেখাইবার কী আবশ্বক ছিল । দ্বিতীয়, ইন্দ্রাণীর রূপের গর্ব। ইন্দ্রাণীর রূপটা ছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নাই এবং নিম্নপদস্থ ব্যক্তির এত অধিক রূপ থাকা অনাবশ্যক এবং অন্যায় হইতে পারে, কিন্তু তাহার গর্বটা সম্পূর্ণ নয়নতারার কল্পনা। রূপের জন্য কাহাকেও দোষী করা যায় না, এইজন্য নিন্দা করিতে হইলে অগত্যা গর্বের অবতারণা করিতে হয়। তৃতীয়, ইন্দ্রাণীর দাম্ভিকতা, চলিত ভাষায় যাহাকে বলে দেমাক। ইন্দ্রাণীর একটি স্বাভাবিক গাম্ভীর্য ছিল। অত্যন্ত প্রিয় পরিচিত ব্যক্তি ব্যতীত সে কাহারে সহিত নখমাধি করিতে পারিত না। তাহা ছাড়া গায়ে পড়িয়া একটা সোরগোল করা,