পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গল্পগুচ্ছ ২২৯ তহবিল হইতে সমস্ত টাকা উঠাইয়া লইয়াছে। বাকীগাড়ি পরগনা অনেক কাল হইতেই পার্শ্ববর্তী জমিদারের নিকট রেহেনে আবদ্ধ ; সে এ-পর্যন্ত টাকার জন্য কোনোপ্রকার তাগাদ না দিয়া অনেক টাকা স্বদ জমিতে দিয়াছে, এখন সময় বুঝিয়া হঠাৎ ডিক্রি করিয়া লইতে উদ্যত হইয়াছে। এই তো বিপদ । শুনিয়া অম্বিকাচরণ কিছুক্ষণ স্তম্ভিত হইয়া রছিলেন। অবশেষে কহিলেন, “আজি কিছুই ভেবে উঠতে পারছি নে, কাল এর পরামর্শ করা যাবে।” খাজাঞ্চি যখন বিদায় লইতে উঠিলেন তখন অম্বিক তাহার ইস্তফাপত্র চাহিয়া লইলেন । g অন্তঃপুরে আসিয়া অম্বিক ইন্দ্রাণীকে সকল কথা বিস্তারিত জানাইয়া কছিলেন, “বিনোদের এ অবস্থায় তো আমি কাজ ছেড়ে দিতে পারি নে ৷” ইন্দ্রাণী অনেকক্ষণ প্রস্তরমূর্তির মতো স্থির হইয়া রহিল। অবশেষে অস্তরের সমস্ত বিরোধদ্বন্দ্ব সবলে দলন করিয়া নিশ্বাস ফেলিয়া কহিল, "না, এখন ছাড়তে পার না।” তাহার পরে ‘কোথায় টাকা’ ‘কোথায় টাকা করিয়া সন্ধান পড়িয়া গেল— যথেষ্ট পরিমাণে টাকা আর জুটে না। অন্তঃপুর হইতে গহনাগুলি সংগ্ৰহ করিবার জন্য অম্বিকা বিনোদকে পরামর্শ দিলেন। ইতিপূর্বে ব্যাবসা উপলক্ষে বিনোদ সে চেষ্টা করিয়াছিলেন, কখনো কৃতকার্য হইতে পারেন নাই। এবারে অনেক অকুনয় বিনয় করিয়া, অনেক কাদিয়া-কাটিয়া, অনেক দীনতা স্বীকার করিয়া গহনাগুলি ভিক্ষা চাহিলেন । নয়নতারা কিছুতেই দিলেন না ; তিনি মনে করিলেন, র্তাহার চারি দিক হইতে সকলই খসিয়া পড়িবার উপক্রম হইয়াছে ; এখন এই গহনাগুলি তাহার একমাত্র শেষ অবলম্বনস্থল— এবং ইহা তিনি অস্তিম আগ্রহ সহকারে প্রাণপণে চাপিয়া ধরিলেন । যখন কোথা হইতেও কোনো টাকা পাওয়া গেল না তখন ইন্দ্রাণীর প্রতিহিংসাভ্ৰকুটির উপরে একটা তীব্র আনন্দের জ্যোতি পতিত হইল। সে তাহার স্বামীর হাত চাপিয়া ধরিয়া কহিল, “তোমার যাহা কৰ্তব্য তাহা তো করিয়াছ ; এখন তুমি ক্ষাস্ত হও, যাহা হইবার তা হউক ৷” স্বামীর অবমাননায় উদ্দীপ্ত সতীর রোষানল এখনো নির্বাপিত হয় নাই দেখিয়া অম্বিক মনে মনে হাসিলেন । বিপদের দিনে অসহায় বালকের ন্যায় বিনোদ তাহার উপরে এমন একান্ত নির্ভর করিয়াছে যে, তাহার প্রতি র্তাহার দয়ার উদ্রেক হইয়াছে— এখন তাহাকে তিনি কিছুতেই ত্যাগ করিতে পারেন না । তিনি মনে করিতেছিলেন, তাহার নিজের বিষয় আবদ্ধ রাখিয়া টাকা উঠাইবার চেষ্টা করিবেন । কিন্তু