পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 বিরাট প্রাণের বিরাট মৃত্যুর গুপ্তসঞ্চার তোমার যে মাটির তলায় তাকে আজ স্পর্শ করি, উপলব্ধি করি সর্ব দেহে মনে । অগণিত যুগযুগান্তরের অসংখ্য মানুষের লুপ্ত দেহ পুঞ্জিত তার ধুলায়। আমিও রেখে যাব কয় মুষ্টি ধূলি আমার সমস্ত সুখদু:খের শেষ পরিণাম— রেখে যাব এই নামগ্রাসী, আকারগ্রাসী, সকল-পরিচয়-গ্রাসী নিঃশব্দ মহাধূলিরাশির মধ্যে। অচল অবরোধে আবদ্ধ পৃথিবী, মেঘলোকে উধাও পৃথিবী, গিরিশৃঙ্গমালার মহং মৌনে ধ্যাননিমগ্ন পৃথিবী, নীলাম্বুরাশির অতন্দ্রতরঙ্গে কলমন্দ্রমুখরা পৃথিবী, অন্নপূর্ণ তুমি মুন্দরী, অন্নরিক্ত তুমি ভীষণ । এক দিকে আপঙ্কধান্যভারনম্র তোমার শস্তক্ষেত্র, সেখানে প্রসন্ন প্রভাতসূর্য প্রতিদিন মুছে নেয় শিশিরবিন্দু কিরণ-উত্তরীয় বুলিয়ে দিয়ে। অস্তগামী সূর্য গুণমশস্তহিল্লোলে রেখে যায় অকথিত এই বাণী— ‘আমি আনন্দিত | অন্য দিকে তোমার জলহীন ফলহীন আতঙ্কপাণ্ডুর মরুক্ষেত্রে পরিকীর্ণ পশুকঙ্কালের মধ্যে মরীচিকার প্রেতন্ত্য। বৈশাখে দেখেছি বিদ্যুৎচঞ্চুবিদ্ধ দিগন্তকে ছিনিয়ে নিতে এল কালে শু্যেনপাখির মতো তোমার ঝড়, সমস্ত আকাশটা ডেকে উঠল যেন কেশর-ফোল সিংহ, তার লেজের ঝাপটে ডালপালা আলুথালু ক’রে হতাশ বনস্পতি ধুলায় পড়ল উবুড় হয়ে। হাওয়ার মুখে ছুটল ভাঙা কুঁড়ের চাল শিকল-ছেড়া কয়েদি-ডাকাতের মতো । আবার ফাঙ্কনে দেখেছি তোমার আতপ্ত দক্ষিনে হাওয়া ছড়িয়ে দিয়েছে বিরহমিলনের স্বগতপ্ৰলাপ আম্রমুকুলের গন্ধে।