পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী هواث ডাকিতে আরম্ভ করিল, ঝিল্লিধ্বনি যেন করাত দিয়া অন্ধকারকে চিরিতে লাগিল । সম্মুখে আজ যেন সমস্ত জগতের রথযাত্রা— চাকা ঘুরিতেছে, ধ্বজা উড়িতেছে, পৃথিবী কঁাপিতেছে ; মেঘ উড়িয়াছে, বাতাস ছুটিয়াছে, নদী বহিয়াছে, নৌকা চলিয়াছে, গান উঠিয়াছে ; দেখিতে দেখিতে গুরু গুরু শব্দে মেঘ ডাকিয়া উঠিল, বিদ্যুং আকাশকে কাটিয়া কাটিয়া ঝলসিয়া উঠিল, স্থার অন্ধকার হইতে একটা মুষলধারাবী বৃষ্টির গন্ধ জালিতে লাগিল। কেবল নদীর এক তীরে এক পাশ্বে কাঠালিয়া গ্রাম আপন কুটিরদ্ধার বন্ধ করিয়া দীপ নিবাইয়া দিয়া নিঃশব্দে ঘুমাইতে লাগিল। -ı পরদিন তারাপদর মাতা ও ভ্রাতাগণ কাঠালিয়ায় আসিয়া অবতরণ করিলেন, পর দিন কলিকাতা হইতে বিবিধসামগ্রীপূর্ণ তিনখানা বড়ে নৌকা আসিয়া কাঠালিয়ার জমিদারি কাছারির ঘাটে লাগিল, এবং পরদিন অতি প্রাতে সোনামণি কাগজে কিঞ্চিং আমসত্ত এবং পাতার ঠোঙায় কিঞ্চিৎ আচার লইয়া ভয়ে ভয়ে তারাপদর পাঠগৃহদ্বারে আসিয়া নিঃশব্দে দাড়াইল, কিন্তু পরদিন তারাপদকে দেখা গেল না। স্নেহ-প্রেমবন্ধুত্বের ষড়যন্ত্রবন্ধন তাহাকে চারি দিক হইতে সম্পূর্ণরূপে ঘিরিবার পূর্বেই সমস্ত গ্রামের হৃদয়খানি চুরি করিয়া একদা বর্ষার মেঘান্ধকার রাত্রে এই ব্রাহ্মণবালক আসক্তিবিহীন উদাসীন জননী বিশ্বপৃথিবীর নিকট চলিয়া গিয়াছে। ভাদ্র-কার্তিক ১৩০২ ইচ্ছাপুরণ সুবলচন্দ্রের ছেলেটির নাম সুশীলচন্দ্র । কিন্তু সকল সময়ে নামের মতো মানুষটি হয় না। সেইজন্যই স্থবলচন্দ্র কিছু দুর্বল ছিলেন এবং স্বশীলচন্দ্র বড়ো শাস্ত ছিলেন না। ! , , , ' ছেলেটি পাড়াস্বদ্ধ লোককে অস্থির করিয়া বেড়াইত, সেইজন্ত বাপ মাঝে মাঝে শাসন করিতে ছুটিতেন ; কিন্তু বাপের পায়ে ছিল বাত, আর ছেলেটি হরিণের মতো দোঁড়িতে পারিত ; কাজেই কিল চড়-চাপড় সকল সময় ঠিক জায়গায় গিয়া পড়িত না। কিন্তু সুশীলচন্দ্র দৈবাৎ যেদিন ধরা পড়িতেন সেদিন তাহার আর রক্ষণ থাকিত না 1 · s so *